• পার্বত্য চট্টগ্রাম

    ফাইতং ইউনিয়নের “SKB” ইট ভাটায় প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ

      প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:২৫:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো: আরিফূল ইসলাম,বিশেষ প্রতিনিধি: লামার ফাইতং ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা। পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ এবং বন উজাড় করে পাচার করা হচ্ছে কাঠ। স্কেভেটার দিয়ে সমান তালে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়।

    ইট ভাটায় কাঠ পুড়ানো নিষেধ থাকলেও, তা মানছে না কেউ। সমানতলে প্রতিটি SKB ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে বনের কাঠ।

    স্থানীয়রা জানান, ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ফাইতং ইউনিয়নের ৪ শতাধিক ছোট-বড় পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে।



    প্রসঙ্গত, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’ না মেনে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক বনা লের কাঠ কাটা হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না’। এ আইন অমান্য করলে ‘অনধিক ৩ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন’ মর্মে এ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে। একই আইনের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে ‘জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল ব্যবহার করা যাবে না’।



    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, SKB কবির কোম্পানি মালিকানাধীন ইট ভাটায় প্রবেশ পথেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঠের বড়-বড় স্তুপ।এসব ইটভাটার কোনটিরই নেই সরকারি অনুমোদন। নেই ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া চুল্লির পাশেই জমাট করে রাখা হয়েছে বিশাল কাঠের স্তুপ।

    পাহাড়ি অধিবাসীরা জানান, ইটভাটার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বিগত সময়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেও প্রতিকার পায়নি।

    “এসব ইটভাটার কোনটিরই নেই সরকারি অনুমোদন। নেই ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তর”



    ফাইতং ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার ইট-মাটি পরিবহন ও জ্বালানী লাকড়ি সংগ্রহ কাজে ব্যবহৃত ভারী ট্রাকের কারণে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে চরম বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো।

    এসব ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে শ্বাসকষ্ট প্রদাহ জনিত রোগ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায় প্রত্যেকটি ইটভাটা বনের ভিতরে ও পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে। যাতে করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ।



    উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো সমতল হচ্ছে। বৃক্ষ উজাড় হতে হতে মরুময় হয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভরাট হয়ে গেছে ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া ও খাল। বিরানভূমিতে রূপ নিয়েছে এই জনপদ। প্রশাসনকে বলেও প্রতিকার মিলছেনা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও তারা চলে গেলে আবারো পুরোদমে ইটভাটা শুরু হয়। দিনের পর দিন বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার চেহারা।

    এসব ইটভাটার কয়েকশত গজের মধ্যেই পুলিশ ফাঁড়ি, বন বিভাগের অস্থায়ী বিট অফিসের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কিন্তু বন ও পাহাড় ধ্বংসের এমন হরিলুটের মাঝখানে বসে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।



    ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করা যাবে না’ মর্মে আইনে উল্লেখ আছে। আইন অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্যকোন স্থানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা।



    লামা উপজেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হক বেলাল বলেন, ফাইতং ইউনিয়নের SKB,UBM ইট ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।



    আরও খবর 29

    Sponsered content