• তথ্যপ্রযুক্তি

    দেশের ৯১ ভাগ ব্যবহারকারী দিনের অর্ধেক সময় মোবাইলে ব্যস্ত থাকেন

      প্রতিনিধি ১৮ অক্টোবর ২০২২ , ৯:২৫:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

    0Shares

    চট্টবাণী ডেস্ক: দেশের ৯১ ভাগ ব্যবহারকারী দিনের অর্ধেক সময় মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন। এই ৯১ শতাংশই মনে করেন ফোন ব্যবহারে তাদের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন নারীরা। তাদের এই হার ৬৩ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ ব্যবহারকারী ডিভাইসের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।



    মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বনানীর একটি হোটেলে গ্রামীনফোন আয়োজিত ‌‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ শীর্ষক টেলিনরের এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে আসে। গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ও টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়র্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ এই তথ্য জানান। টেলিনর এশিয়ার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সমীক্ষা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

    সম্প্রতি এশিয়ার আটটি দেশে ৮ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে টেলিনর এশিয়া। টেলিনরের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এ সমীক্ষা চালানো হয়। এই সমীক্ষার ফলাফলে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ৫টি বিষয় তুলে ধরা হয়।



    সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, ‘অলওয়েজ অন’ অর্থাৎ সবসময় সক্রিয় থাকবেন, এমন জীবনযাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন বেশিরভাগ মানুষ। বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন মোবাইল ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটেছে। সবমিলিয়ে এ ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আছেন, এই অঞ্চলে জীবনের মান বিশেষভাবে উন্নত হয়েছে প্রসঙ্গে ৫২ শতাংশ পুরুষের তুলনায় ৬৩ শতাংশ নারী ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কারণে তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে মনে করেন ৫৯ শতাংশ নারী এবং ৫০ শতাংশ পুরুষ।



    গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ও টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়র্গেন সি অ্যারেন্টজ রোস্ট্রাপ বলেন, ‌‘অনেকে ক্ষেত্রেই শোনা যায়, মোবাইল ডিভাইস মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে, আশপাশের বিষয় থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করছে এবং সম্পর্ক ও পারস্পরিক যোগাযোগ দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু এই সমীক্ষা আমাদের অন্যরকম ধারণা দিচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারির আগের সময়ের তুলনায় এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা ঘরে-বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। ডিজিটাল বৈষম্য কোথায় রয়েছে তা এই সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়েছে। এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।



    গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে আসতে গ্রামীণফোন ২৫ বছর ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জরিপে এসেছে, ৯৭ শতাংশ প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তাল মেলাতে উদ্বিগ্ন। এটা ভালো। কারণ, এ ভয় পেলেই তারা পরবর্তী ধাপের জন্য কাজ করবেন। এ উদ্বেগ থেকেই তারা সমাধানের পথ বের করবে। সমাজের ক্ষমতায়ন গ্রামীণফোনের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্যপূরণে কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে আসতে গ্রামীণফোন ২৫ বছর ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।



    সমীক্ষ প্রকাশ পরবর্তী আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র ডেপুটি রেসিডেন্ট প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন এবং চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা, গ্রামীণফোনের চীফ বিজনেস অফিসার ড. আসিফ নাইমুর রশিদ।

    গবেষণার ফলাফল

    ১। আঙুলের ছোঁয়ায় জীবন অলওয়েজ অন্য: প্রায় সব উত্তরদাতাই বলেছেন যে, দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময়জুড়ে তারা ফোন তাদের সাথেই রাখেন, যেখানে প্রতি পাঁচ জনে জানিয়েছেন তিনি কখনই ফোন ছাড়া থাকেন না। তবে, শতকরা প্রায় ৭১ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন তারা প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভারসাম্য বজায় রেখে চলেন। বাংলাদেশে শতকরা ৯১ ভাগ ব্যবহারকারী দিনের অন্তত অর্ধেক সময় তাদের ফোন ব্যবহার করেন, অন্যদিকে ২০ শতাংশ উত্তরদাতা সবসময় তাদের ফোন ব্যবহার করেন বলে জানান।



    শতকরা ৭৩ ভাগ বাংলাদেশি জানিয়েছেন আগামী ১২-২৪ মাসে তাদের মোবাইল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং বিগত দুই বছরে দেশে এই ডিজিটাল রূপান্তরের গতি কমে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

    ২। ডিজিটাল জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা: এ অঞ্চলের শতকরা ৮৫ ভাগ উত্তরদাতা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের বিষয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশি উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ এ বিষয়ে শঙ্কিত। এই উদ্বেগ অল্পবয়সী উত্তরদাতাদের মাঝে আরও বেশি স্পষ্ট যেখানে শতকরা ৬৮ ভাগ জেন জি’র উত্তরদাতা এবং শতকরা ৬৯ ভাগ মিলেনিয়াল উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।



    ৩। ডিজিটাল পরিসরে আস্থার অভাব: পুরো অঞ্চলজুড়ে মোবাইল ডিভাইসের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে (বাংলাদেশি উত্তরদাতাদের হার ৯৭ শতাংশ)। বাংলাদেশে বেবি ব্লুমারদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জীবনের মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতির কথা স্বীকার করার হার সবচেয়ে বেশি (৭১ শতাংশ)। একই সঙ্গে তারা এই ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন (৮৯ শতাংশ)। পুরো অঞ্চলজুড়ে অন্যস্থানে জেন জি এবং মিলেনিয়াল উত্তরদাতারা জানিয়েছেন তারা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং অনলাইন নিরাপত্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

    ৪। টেকসই জীবনযাপনে মোবাইলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা: মানুষ আরও টেকসই জীবনযাপনের সহায়ক হিসেবে মোবাইল প্রযুক্তির সম্ভাবনার আশাবাদী। শতকরা ৭৪ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, ডিজিটাল অ্যাক্সেস একটি পরিবেশবান্ধব জীবন যাপনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শতকরা ৬৯ ভাগ বাংলাদেশি উত্তরদাতা মনে করেন, কাগজ, বর্জ্য এবং বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে এবং যোগাযোগকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুললে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে (৭৪ শতাংশ)।



    ৫। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করছে মোবাইল প্রযুক্তি: সমীক্ষায় মোবাইল ব্যবহারের বৃহত্তর সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন, মোবাইল কানেক্টিভিটি অন্তর্ভুক্তি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মোবাইল কানেক্টিভিটি সাধারণের জন্য শিক্ষা (৬৪ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবার (৫৫ শতাংশ) মতো প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি আরও সহজলভ্য করে। পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি নারী মনে করেন মোবাইল সংযোগ তাদের কর্মসংস্থান এবং উপার্জনের বিকল্পগুলো উন্নত করেছে। সেইসঙ্গে এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা অর্জনে সহায়তা করেছে।



    0Shares

    আরও খবর 18

    Sponsered content