প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৪৮:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: একজন আরেকজনকে দোষারোপ করার ওই সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি না। ব্যাপারটা হচ্ছে জলাবদ্ধতা হচ্ছে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবে একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি মেয়র, কাউন্সিলররা। এ মহানগরের মানুষ আমাকে এবং কাউন্সিলরদের দিয়ে নির্বাচিত করেছে।অন্য কোনো সংস্থায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রাম শহরে যেই ভালোমন্দ করুক না কেন মানুষ আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় মেয়রের দিকে। কারণ মেয়রের প্রতি অনেক প্রত্যাশা, আবদারও থাকে। মেয়রকে ওরা গালাগালিও করে। আবার সুনামও করে। এটা করবেই। ওদের অধিকার আছে। কারণ ওরা ভোট দিয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) জলাবদ্ধতা প্রকল্প বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে টাইগারপাসে নিজের দপ্তরে মেয়র সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, আমি কাউকে দোষারোপ করবো না। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে- সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার উনি একজন কর্মচারী। উনি কোনো অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধি কাউন্সিলরদের প্রতি আঙুল উঁচু করে কথা বলতে পারে না এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকেও দোষারোপ করতে পারে না। উনি কোন ভিত্তির ওপর কোন জরিপের ওপর ভিত্তি করে বলছে যে নালাগুলো ভরাট তাই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। উনি কি জরিপ চালিয়েছেন। অনুমান করে কাউকে দোষারোপ করাটা কোনো অবস্থায় সমীচীন নয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হাতে নেই।
আমরা নতুন খাল করছি। সাত আট বছর আগের প্রকল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক বলেই একনেকে ম্যাচিং ফান্ড ছাড়া পাস করিয়ে দিয়েছেন। ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। হ্যাঁ সিটি করপোরেশেনের এক-দুই ফুটের নালাও আছে। পলিথিন পেলে, গার্বেজ ফেলে। হয়তো এই পরিষ্কার করলাম, এক সপ্তাহ পর ভরাট হয়ে গেছে। এটি চলমান কাজ। প্রতিনিয়ত আমরা পরিষ্কার করছি। ছোট ছোট এ নালার জন্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এটা আমার ধারণায় আসে না।
আমি বারবার বলেছি জলাবদ্ধতার কাজ চলছে। কত মাটি উত্তোলন, খালের গভীরতা কত হবে আমরা জানি না। ডিপিপিতে দেখেছি, সাড়ে ৯ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলনের কথা। এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কথা। মাটি উত্তোলন করেছেন খুব ভালো কথা। চাক্তাই খাল দৃশ্যমান জিনিস। সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতি আবেদন জানাব, চাক্তাই খাল জনাব মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে তলা পাকা করা হয়েছে। এখনি গিয়ে দেখে আসেন, যদি এটা খনন করা হয় তাহলে পাকাতলা পর্যন্ত খালি থাকবে। পাহাড় পরিমাণ মাটি কেমনে চাক্তাই খালে থাকে। মহেশখাল দেখে আসেন। এগুলো দৃশ্যমান জিনিস। যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামবাসী সুফল পাবে। এ প্রকল্প সিটি করপোরেশনের ওপর থাকলে দায়দায়িত্ব আমার ওপর পড়ত। কারণ মানুষ চায় স্বস্তি। মানুষ যেভাবে কষ্ট পাচ্ছে তাদের অবস্থা আপনারা অবগত আছেন।
ঢাকায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আমি বলেছি, খালের দুই পাশে দেয়াল দেওয়ার আগে মাটি উত্তোলন করেন। নয়তো গতবার একগলা পানি হয়েছে এবার পানি গলার ওপর হবে। পানির গতি নিচের দিকে। আমি বললাম নালা ভরাট হলে সড়কে পানি উঠবে। খালা ভরাট হওয়াতে পানি আটকে যাচ্ছে। সকালে চামড়ার গুদাম দেখেছি। চাক্তাই খালের মোহনায় দেখেন পানি নেই তেমন। পানি সব এলাকায় এলাকায় জমে আছে। এ পানি সরতে পারছে না বলেই তো জলাবদ্ধতা হয়েছে । এবার পানি বেশি হয়েছে। সেটার কারণও আছে। এবার মৌসুমে ৩০ বছরের মধ্যে মনে হয় এ রকম বৃষ্টিপাত হয়নি। জোয়ারের পানি ঢুকেছে। আমরা আগেও বলেছি, আমাদের এলজিআরডি মন্ত্রী দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন যে প্রবল স্রোতে পানি যায় যে স্লুইসগেট করা হয়েছে সেগুলো সে রকম প্রশস্ত নয়। খালের মুখ ৯০ ফুট, স্লুইস গেট সরু। প্রবল স্রোতে যাওয়া পানি সরতে পারে না। সেখানে ময়লা আটকে থাকে। স্লুইসগেটে জলকপাট লাগানো হয়নি। প্রবল জোয়ার ঢুকেছে। তাই পানি বেশি হয়েছে।
আমি কাউকে দোষারোপ করবো না। চসিক-সিডিএ দ্বন্দ্ব না। চট্টগ্রাম শহরবাসী যাতে স্বস্তি পায় সে জন্য কথাগুলো বলতে হচ্ছে। কারও প্রতি বিদ্বেষ নেই। খালগুলো দেখে আসেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছু নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চসিকের হাতে নেই। এখানে আমি কাজ করতে পারছি না, ওভারলেপিং হয়ে যাবে। যে সংস্থা কাজ করছে মেইনটেইনেন্সের সব কাজ তাদের। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে, সেখানে চসিক কাজ করতে পারে না। বলবে তুমি কেন টাকা খরচ করতে গেছ।
বারইপাড়া খাল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি নতুন খাল সৃষ্টি করছি। এর পুরো জায়গা অধিগ্রহণ করে আমাকে দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসক বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ২১টি খালের দায়িত্ব শুধু আমাদের নয়। এগুলো উপখাল। আরএসে আছে, সিএসে আছে কিন্তু খালের অস্তিত্ব নেই। প্রভাবশালীরা ভরাট করে ফেলেছে। খালের অস্তিত্ব নেই। মন্ত্রণালয়ে লিখেছি ফান্ড দেওয়ার জন্য। যদি ফান্ড দেয় তাহলে এগুলো পুনর্খনন করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এত অর্থ নেই যে এসব খাল পুনর্খনন করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, পরিবেশগত পরিবর্তন প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এটা আমরা সবাই জানি। পরিবেশের পরিবর্তনের ফল হাতে পাচ্ছি। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে প্রকল্প নেওয়া উচিত।
উন্নত দেশের মতো নালায় নেট দেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বলেন, সিঙ্গাপুর বা অন্যদেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। আমাদের নালা-নর্দমা এত বেশি। আমরা পলিথিনের জন্য জরিমানা করছি। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি। মানুষের মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত সচেতনতা আসবে না কিছুই হবে না। আমরা কয়েকটা খালে পরীক্ষামূলকভাবে নেট দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। চমেক থেকে হিজড়া খালে নেট দেব এবং প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করবো। পরীক্ষামূলক করে যদি সুফল পাই তাহলে অন্য খালগুলোতে করতে পারি।
তিনি বলেন, যে ব্রিজগুলো আছে তার নিচ দিয়ে ওয়াসার পাইপ, গ্যাসের পাই, টিঅ্যান্ডটির পাইপ গেছে। প্রতিনিয়ত কাহাতক আপনি পরিষ্কার করবেন। সকালে পরিষ্কার করলে দেখবেন বিকেলে আবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাইপ সরানোর জন্য সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি লিখতে বলেছি। এটা সরানো গেলে গার্বেজ জমে পানি অপসারণে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা অনেকাংশে কমে আসবে।
-সুত্র: বাংলানিউজ।