প্রতিনিধি ২৫ নভেম্বর ২০২৪ , ১০:১৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
নুরুল আবছার নূরী: তখন সকাল নয়টা। ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে রোগীর প্রচুর ভিড়। চারদিকে প্রচন্ড হইচই। সবার অপেক্ষা চিকিৎসকের। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা নেই। অবশেষে তাঁরা এলেন সকাল ১০টার দিকে। ততক্ষণে রোগীর সংখ্যা এক-দেড়-শ ছাড়িয়ে গেছে। ২৪ নভেম্বর রবিবার নয়টা থেকে এগারটা পর্যন্ত অবস্থান করে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
রোগী ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চিকিৎসকেরা প্রতিদিনই আসেন সকাল ১০টার দিকে। চলে যান দুপুর দেড়টার আগে। স্বাস্থকেন্দ্রে রোগী বেশি হলে অনেককে বলেন পরের দিন আসতে। ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা লোকজন।
উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারমাসিয়া গ্রাম থেকে আসা আলম মিয়া (৪৪) বলেন, ‘প্রতিদিনই চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন দেরিতে, আর চলে যান আগেভাগে।’ এ দেশে এটা কোন অবস্থাতেই হতে পারে না।
আলম মিয়ার মতো একই কথা বলেন আছমা আকতার (৩৩), শারমিন জাহান (২২), আইয়ুব আলী (৪৩), মহিনুর রহমান (৪৮), মমতাজ শিরিনসহ (২৭) অন্যান্য রোগীরাও। তাঁরা বলেন, ‘চিকিৎসকদের কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহান রোগীরা। অনেকে উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে আসেন। চিকিৎসক দেখিয়ে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টায় রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এ সময় শুধু জরুরি বিভাগ ছাড়া সব চিকিৎসকের কক্ষের দরজা খোলা থাকলেও চিকিৎসক থাকেন না। তখন বন্ধ থাকে পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে উপরিও দিতে হয়। এর ফলে টিকিট নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন অনেক রোগী।
এদিকে, বহির্বিভাগে সকাল নয়টার আগে টিকিট দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। অন্তঃবিভাগে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে প্রায় সময়। যাদের চিকিৎসাসেবার জন্য ৯ জন চিকিৎসক কর্মরত। এর মধ্যে কমবেশি সবাই চট্টগ্রাম শহরে থেকেই স্বাস্থকেন্দ্রে আসা-যাওয়া করেন। এ কারণে শহর থেকে কোনো চিকিৎসক সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারেন না। আবার দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে চলে যান তাঁরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল নয়টায় শতাধিক রোগী টিকিট হাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে। অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এরমধ্যে সকাল সাড়ে নয়টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম এসে তাঁর কার্যালয়ে কয়েকজন চিকিৎসক নিয়ে চা-নাস্তা করছেন। দশটার দিকে ৪০ নং কক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়নাল আবেদিন মুহুরী। ৪৭ নং কক্ষে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন চিকিৎসক নাজমুল হাসান। পৌনে এগারটার দিকে কয়েকজন চিকিৎসক আসেন স্ব-স্ব কার্যালয়ে। বেলা ১১টার দিকে আসেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা খান আবদুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া কয়েকজন ছুটিতে বলে জানা যায়। দুইজন চিকিৎসক বেলা এগারটায়ও আসেননি।
দেরিতে আসা প্রসঙ্গে কেউ কথা বলতে চান নি। আবার একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কাগজে কলমে আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সকাল আটটায় আসতে হলে চিকিৎসকদের ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে, অন্যথায় শহর থেকে সময়মতো আসা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকেরা থাকতে চান না। ফলে তাদের আসতে একটু দেরি হয়। কিন্তু রোগী না দেখে ফেরেন না কোনো চিকিৎসক।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সরকারি নিয়ম রয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেরিতে আসা আর নির্দিষ্ট সময়ের আগে চলে যাওয়া সম্পূর্ণ অনিয়ম। সরকারতো তাদের অর্ধেক বেতন দিচ্ছেন না। তাছাড়া এসব কারণে রোগীদের কষ্ট পাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’