• মহানগর

    চট্টগ্রামে কুমারী পূজার প্রস্তুতি

      প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:২৩:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    0Shares

    চট্টবাণী: শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চট্টগ্রামে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এ লক্ষ্যে নির্বাচিত করা হয়েছে কুমারীদের।

    জেলার তিনটি স্থানে ২০২৩ সালে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এর মধ্যে নগরের পাথরঘাটা হরচন্দ্র মুন্সেফ লেইনের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের মোহন্ত শ্যামানন্দ দাস (শ্যামল সাধু) এর পৌরহিত্যে ১১ কন্যা শিশুকে কুমারী রূপে পূজা করা হয় মহাঅষ্টমীর সকালে।




    এবারও এমন আয়োজন থাকলেও কমছে কুমারী মাতার সংখ্যা। শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের ২য় মহারাজ বলরাম দাস বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে সীমিত আয়োজনে। লক্ষ্য ছিল, গতবারের চেয়ে আরও বড় আকারে ১০৮ জন কুমারীকে পূজা করা হবে। তবে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে এখন ৪-৫ জন কন্যা শিশুকে কুমারী রূপে পূজা করার প্রস্তুতি চলছে।

    পঞ্জিকা মতে, ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পঞ্চমী তিথিতে শারদীয় দুর্গাদেবীর বোধন, ৯ অক্টোবর (বুধবার) ষষ্ঠী তিথিতে সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সপ্তমী তিথিতে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, কল্পারম্ভ ও পূজা, ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) মহাষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা শেষে সন্ধিপূজা, মহানবমী পূজা, ১২ অক্টোবর (শনিবার) বিজয়া দশমী তিথিতে দশমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

    নগরের আন্দরকিল্লা রাজাপুর লেইন শ্রীশ্রী পঞ্চমাতা বিগ্রহ মন্দিরে গত বছর প্রথমবারের মতো ৫ বছরে ঋত্বিকা সাহাকে মাতৃদেবীর ‘সুভগা’ রূপে পূজা করা হয়। মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, এবারও পঞ্চমাতা বিগ্রহের সম্মুখে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু মহাষ্টমী তিথির সময়কাল কম, সেহেতু ওই সময়ের মধ্যেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হবে।




    সীতাকুণ্ডের ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রমেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় গত বছর। ‘কুমারী মা’ হন সায়ন্তিকা বসু রায় চৌধুরী। তিনি অপরাজিতা নামে পূজিত হন। ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী উমেশানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, ভোরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মহামায়া বিশ্বব্যাপিণী হলেও নারীমূর্তিতে তাঁর সমধিক প্রকাশ। দেবীর অংশে নারী মাত্রেরই জন্ম। অল্পবয়স্কা, সমবয়স্কা বা বয়োবৃদ্ধা নারী মাত্রই জগদম্ভারই জীবন্ত মূর্তি। প্রত্যেক নারীকে দেবীমূর্তি জ্ঞানে শ্রদ্ধা করাই মহামায়ার শ্রেষ্ঠ উপাসনা। এ জন্যই দুর্গাপূজায় কুমারী পূজার বিধি। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে, যেখানে নারীরা পূজিতা হন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন। যেখানে নারীরা সম্মানিতা হন না, সেখানে সব কাজই নিষ্ফল।

    এ প্রসঙ্গে পণ্ডিত অমল চক্রবর্তী বলেন, যোগিনীতন্ত্র, কুলার্ণবতন্ত্র, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম, তন্ত্রসার, প্রাণতোষিণী, পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি ও মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। দেবীজ্ঞানে যে কোনও কুমারীই পূজনীয়। এক থেকে ষোলো বছর বয়সী কুমারীকে পূজা করা যায়।




    তন্ত্রসারে বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন- এক বছরের কন্যার নাম সন্ধ্যা, দুই বছরের কন্যার নাম সরস্বতী, তিন বছরের কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি, চার বছরের কন্যার নাম কালিকা, পাঁচ বছরের কন্যার নাম সুভাগা, ছয় বছরের কন্যার নাম উমা, সাত বছরের কন্যার নাম মালিনী, আট বছরের কন্যার নাম কুব্জিকা, নয় বছরের কন্যার নাম কালসন্দর্ভা, দশ বছরের কন্যার নাম অপরাজিতা, এগারো বছরের কন্যার নাম রুদ্রাণী, বারো বছরের কন্যার নাম ভৈরবী, তেরো বছরের কন্যার নাম মহালক্ষ্মী, চৌদ্দ বছরের কন্যার নাম পীঠনায়িকা, পনেরো বছরের কন্যার নাম ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরের কন্যার নাম অন্নদা বা অম্বিকা।

    উল্লেখ্য, ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতা বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজায় অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার প্রবর্তন করেন।




    চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, নগরের ১৬ থানার অধীনে ২৯২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

    0Shares

    আরও খবর 25

    Sponsered content