প্রতিনিধি ১৭ মে ২০২৪ , ৮:৩২:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকৌশলী মাশুকুর রহমান চৌধুরী : সোশ্যাল মিডিয়া, আমাদের ব্যাসিক হিউম্যানিটি থেকে লাথি মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের ইন্টেলেক্টকে সীমাবদ্ধ করে রাখছে কয়েক অক্ষরের স্ট্যাটাস আর লাইকের বহরে। ছুঁড়ে দিচ্ছে আমাদের হতাশার কূপে। অসংশোধনীয় ক্ষতি করে যাচ্ছে আমাদের পার্সোনাল রিলেশনশিপে।
ফেসবুকের প্রথম দিককার একজন এক্সিকিউটিভ বলেছিলো, আই ফিল আই ফিল ট্রিমেন্ডাস গিল্ট যে সোশ্যাল মিডিয়া আসলে তার ইউজারদের প্রোগ্রাম করছে এবং ধ্বংস করছে ব্যাসিক সামাজিক কাঠামোকে।
আপনার ব্যবহার, আপনি রিয়েলাইজ করতে পারছেন না, কিন্তু মূলত আপনি প্রোগর্যামড। এতা অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিলো, কিন্তু এখন আপনাকে ডিসাইড করতে হবে আপনি কি করবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ডিজাইন করা হয়েছে এডিক্টিভ হবার জন্য। এটা সম পরিমাণ ডোপামিন হিট তৈরি করে যত টুকু করে ড্রিংকিং এলকোহল, গ্যাম্বলিং।
যখন নতুন একটা টেক্সট পান, আপনার ভালো লাগে। যখন লাইকে ভরে যায় আপনার স্ট্যাটাস, আপনার ভালো লাগে। কারন এটা ব্যাসিক সাইন্স, ইট রিলিজেস ডোপামিন।
খুব ডিপ্রেশনে পরে আছেন, ফেসবুক খুলে একটা স্ট্যাটাস কিংবা অনলাইনে থাকা মানুষ গুলোকে নক করা, কারন ইটস ফিলস গুড টু গেট এ রেসপন্স।
এজন্য আমরা লাইক গুনি। এজন্য আমরা শেয়ার গুনি। এজন্য আমরা দশবার চেক করি কতটা লাইক কমেন্ট পড়লো আমাদের স্ট্যাটাসে।
যদি লাইক কম পরে, একটু শেয়ার কম হয়, ইন্সটাগ্রামে ছবিতে রেসপন্স কম হলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই, কি ভুল করলাম আমি। লাইক এত স্লো
কেন, তারা কি আমাকে আর পছন্দ করে না তাহলে। মেন্টাল আন্সাউন্ডনেস যখন কেউ আমাকে বা আপনাকে আনফ্রেন্ড করলো।
কারন এটা এডিক্টিভ। আমাদের ভালো লাগে, যখন উই গেট হিট। ইটস হাইলি এডিক্টিভ।
একটা টার্ম হয়তো শুনেছেন।
ইন্সটাগ্রাম পোয়েট।
কিছু মানুষ ইন্সটাগ্রামে ছবির সাথে দুই তিনটা লাইন দিয়ে পোস্ট করে। দে আর পোয়েট। দে আর রাইটার। দে আর মোটিভেশনাল স্পিকার।
এন্ড আই ওয়াজ থিংকিং, একটা বই লেখার সাহস হয়নি আমার কখনো।
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি কিছু পোস্টে লোক নেয়। দে আর কল্ড এটেনশন ইঞ্জিনিয়ার্স। তারা কাজ করে হাউ টু মেইক দেয়ার এপস, সাইট মোর এডিক্টিভ। এজন্য তারা বিভিন্ন ক্যাসিনোর হেল্পও নেয়। তারা গ্যাম্বলিং ক্যাসিনোর প্রিন্সিপ্যাল ইউজ করে কিভাবে এই প্রোডাক্টকে আরও এডিক্টিভ করা যাবে।
ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোমের নাম শুনেছেন? টার্মটার সাথে পরিচিত না হলেও আপনার আমার সবার জীবনেই এটা ঘটেছে।
ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম হলো, মনে হচ্ছে আপনার পকেটে থাকা ফোনটি ভাইব্রেট করছে, কিংবা রিং বাজছে আপনার ফোনের। পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে দেখলেন, না,এরকম কিছুই না। প্রতিনিয়ত ফোন বের করে চেক করার একটা অভ্যাস এর ফসঅল এটা, মনে ভেতর কাজ করে যাচ্ছে, রাতের স্ট্যাটাসটায় লাইক কত পড়লো, কমেন্টে কে কি করছে, কি হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে? ইন্সিকিউর কিংবা এংজাইটিতে ভোগা লোকেরা এটা বেশী ফিল করে।
ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন, মনে হচ্ছে আপনার ফোন ভাইব্রেট করছে, রিং হচ্ছে। তাই এই রোগের আরও কিছু নাম
‘রিংএংজাইটি’। গবেষকরা এটাকে সিনড্রোমে আখ্যায়িত করতে সময় নিচ্ছে, কারন এটা আসলে একটা ট্যাক্টাইল হেলুসিনেশন।
রাস্তা দিয়ে তাকান। সবাই তাদের মাথা লিটারাললি ডুবিয়ে রেখেছে তাদের ফোনের ভেতর। চারপাশে ঘটে যাওয়া বিপদ দুর্ঘটনা বৈচিত্র তাদের মাথাকে উপরে ওঠাতে পারছে না। পারছে, দুর্ঘটনার ছবি তুলতে, তা পোস্ট করে আবার ডুবে যেতে সামাজিক মাধ্যমে।
বেটার এংগেলে একটা সেলফি, আলো ভালো এমন কনে গিয়ে একটা ছবি,টানা ৩০টা ছবি তোলা বাধ্যতামূলক,একটা তো ভালো আসবেই।
এন্ডলেস ডেস্পারেট কমপালশন ফর ভ্যালিডেশন।
আমরা বসবাস করছি, আমি আমি আমি আমি জেনেরেশনে।কন্সট্যান্ট নিড অফ রিএশিউরেন্স ড্যাট দে একজিস্ট।
কে পূরণ করছে এই চাহিদা? সোশ্যাল মিডিয়া।
উন্মত্ত নারসিসিজমকে তারা স্ট্রেস রিলিফের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহন করেছে। বিসর্জন দিচ্ছে ব্যাসিক হিউম্যান কমন সেন্স, ব্যাসিক হিউম্যান পোলাইটনেস।
লাইক শেয়ার রিটুইট বাচ্চাদের মুখে থাকা চুসনির মত কাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ইনফ্যান্টালাইজ করে দিচ্ছে, ফিরে যাচ্ছি আমরা বাচ্চাদের মত খেলবো না, আউট মানি না কারন ব্যাট আমার, আব্বুকে বলে দিবো, এলাকায় আসিস, অনেক মারবো এমন সব বিহেভিয়ারে।
আর একটা ইনফ্যান্টের বিশিষ্ট কি? শর্ট এটেনশন স্পান। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মনযোগ দেয়ার ক্ষমতা বাচ্চাদের লেভেলে নিয়ে গেছে। ইউটিউবে এসাইন্টমেন্টের কাজ করতে গিয়ে বাঘ আর সিংহের শংকরে জন্ম নেয়া বাচ্চা দেখতে দেখতে বের হয়েছেন কতবার হিসেব করতে পারেন।
আর একের পর এক ইস্যু, একের পর এক তথ্য, আমাদের ভাবতে দিচ্ছে না। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমারে থিংকিং ক্যাপাবিলিটি। তড়িৎ গতিতে কিছু লিখতেই হবে, প্রকাশ করতে হবে আমার মনে কথা,নাইলে ট্রেন্ড থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবো। তাই না ভেবে না বুঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি আমাদের অপক্ক চিন্তা ভাবনা। সৃষ্টি হচ্ছে গুজবের।
তাই, সব কিছু এখন একটা সুপারফিশিয়াল স্নাপশট।
ওর বাবা মারা গেছে। হ্যা, দেখলাম ফেসবুকে।
ও বিয়ে করলো সেই দিন। হ্যা, ছবি দেখলাম।
নতুন থিসিস পেপার জমা দিলাম। হ্যা, থিসিসের কাভারে ছবিটা সুন্দর।
আপনাদের ভেতর অনেকেই এই লেখাটি পুরোটা পড়বেন না। না পড়েই কমেন্ট করা শুরু করবেন। কিংবা বাকি কমেন্ট পড়ে বুঝার চেষ্টা করবেন আমি কি লিখলাম।
সোশ্যাল মিডিয়া হতাশার অন্যতম কারন। যখন আপনি আপনার বন্ধুর সতর্ক পরিশোধিত দুঃখ কেটে ফটোশপ করে বাদ দেয়া আমেজিং ইন্টারেস্টিং জীবন আর সুখ সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেন, তখন আপনি নিজেকে সেটার সাথে তুলনা করা শুরু করেন। সে কতটা এগিয়ে আর আপনি কতটা পিছিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়া রিয়েল ওয়ার্ল্ড থেকে আমাদের দূরে ঠেলছে। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত মানুশগুলো আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে, তারা কনফিউজড জেনেরেশন। তারা আম গাছ চেনে না। তারা কাক বাদে কোন পাখি নিজ চোখে দেখেনি।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ফ্রিলি নিজেকে এক্সপেস করতে দিচ্ছে। নিজের মনের ভাবকে, নিজের মনের কথাকে। উলটো ফলাফল।
লেখক: প্রকৌশলী ও কলামিষ্ট।