প্রতিনিধি ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ , ১:৩৩:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
মো: আরিফুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি: মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার হাইওয়ে (মহসড়কে) চলছে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন। চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স,নেই প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র।
গাড়ির কোন কাগজপত্র নেই,তাতে কি হয়েছে মাসিক টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট টোকেনে চলছে তিন চাকার থ্রী-হুইলার সিএনজি, মাহিন্দ্রা,ট্রলি,ডাম্পার, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা,চার চাকার লেগুনা মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ এসব গাড়ি।
সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও লাইসেন্স থাকাটাও ভালোভাবে দেখেন না। এভাবে চলছে বছরের পর বছর গাড়ির টোকেন বাণিজ্য। ফলে সরকারও প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অহরহ অভিযোগ রয়েছে।
সড়কের ওপর ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ “থ্রী হুইলার এবং চাকার লেগুনা গাড়ির স্টেশন” হলেও লাইসেন্স বিহীন চালক ও গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের।
হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে লোহাগাড়া স্টেশন থেকে প্রতিদিন তিন চাকার যানবাহনগুলো চট্টগ্রামমুখী সড়কে লোহাগাড়া থেকে পদুয়া-ঠাকুরদিঘী- কেরানীহাট হয়ে দোহাজারী ষ্টেশন পর্যন্ত এবং কক্সবাজারমুখী সড়কের আধুনগর-চুনতি-আজিজনগর হয়ে চকরিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে।
একাধিক সিএনজি চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইসেন্স থাকার চাইতে না থাকাই ভালো। কারণ, যেসব চালকের লাইসেন্স নেই বা গাড়ির কাগজপত্রে সমস্যা আছে তাদের মাসিক চাঁদার বিনিময়ে নির্দিষ্ট ‘টোকেন’ নিলেই পুরো মাস চলে। কিন্তু যাদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে, তাদের চেক করার নামে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে হাইওয়ে পুলিশ ও লোহাগাড়া ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
নাম প্রকাশ্যে সিএনজি চালক বলেন, দীর্ঘ ২ বছর হচ্ছে বিআরটিএ অফিসে গাড়ীর লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য টাকা জমা দিয়েছি কিন্তু কোন কাগজ পায়নি। ফলে সরকার প্রতিবছর নবায়ন ফি: যেমন পাচ্ছে না তেমনি এদিকে চাঁদাবাজিও বন্ধ হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রতি মাসে লাইসেন্স বিহীন গাড়ীর জন্য মাসিক দিতে হয় ৩০০০ টাকা, কার কাছে দিতে হয় জানতে চাইলে আর কিছু বলা সম্ভব না বলেন।
অন্যদিকে লাইসেন্সধারী গাড়ীর জন্য দিতে হয় মাসিক ৩০০ টাকা। এই চাঁদার হার কোথাও দৈনিক আবার কোথাও মাসিক। চাঁদার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা টোকেন। এসব টোকেন সরবরাহ করে শ্রমিকনেতা নামধারী এক শ্রেণির দালালরা। তারাই টোকেন বিকিকিনির কাজ করেন।
মাসিক “মাসোয়ারা” বাণিজ্যের একটি বড় অংশ পায় হাইওয়ে পুলিশের ক্যাশিয়ার।
তবে সবচেয়ে বড় অংশটি পান তথাকথিত দালালরা। এসব টোকেন বিক্রি ও চাঁদা আদায়ের জন্য স্টেশন গুলোতে রয়েছে আলাদা লাঠিয়াল বাহিনী। প্রতিটি স্টেশনের এসব লাঠিয়াল বাহিনীকে প্রতিদিন দিতে হয় ১০/২০ টাকা। সরকার পুরো রাস্তা যেন তাদেরকে লীজ দিয়েছে।
“এদিকে পুলিশ ও দালালদের মাধ্যমে টোকেন বাণিজ্য নিয়ে চালকরা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে চান না”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, এক কাপড়ে নিষিদ্ধ যানবাহন গুলোর টোকেন বাণিজ্য করা ব্যক্তিরা এখন বহুতল ভবন সহ একাধিক গাড়ীর মালিক বনে গেছে। তাদের আয়ের উৎস কোথায় ?
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে মহাসড়কের জাঙ্গালীয়া নামক স্থানে প্রতিদিন দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে বালু,ইট ভর্তি ট্রাক,মোটরসাইকেল, যাত্রীবাহি বাস এসবকে থামানোর সংকেত দিয়ে থামাতে দেখা যায়। কিন্তু উনাদের সামনে মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ যানবাহন তিন চাকার সিএনজি থ্রী-হুইলার,ট্রলি, চার চাকার লেগুনা এসব গাড়ি কোন সংকেত ছাড়াই চলাচল করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, পরিবহন সেক্টরে অনিয়মের প্রধান কারণ হলো মালিক-শ্রমিকদের নামে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলো। টোকেন নিয়ে যা হয় তার পেছনেও রয়েছে এসব নেতারা। তারাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।সিএনজি’র টোকেন বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মের জন্য পুলিশ ও পরিবহন নেতারা দুষছেন একে-অপরকে। অনিয়ম যখন নিয়ম হয়, প্রতিরোধ তখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই পরিবহন খাতের এ ধরণের নৈরাজ্য দমনে দুদক, বিআরটিএ এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার আহ্বায়ক মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান,মহাসড়কে সরকার তিনচাকার থ্রী-হুইলার ও চার চাকার চার চাকার লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করেছে।কিন্তু চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কে এইসব যানবাহন দাপটের সাথে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে।যার ফলে প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা।মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর না হয় কিছু করার থাকবে না।
তবে সরকারি কোন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কেউ যদি এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে,তখন তৎপর হয় দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, এইটা যেহেতু বাজার এলাকা এটা অন্য-অন্য খালি জায়গার মত তেমন ফ্রি থাকবে না, বাজারে চতুর্থতমুখী গাড়ি আছে। তবে বাজার হলেও তো এটা তো মহা সড়ক, মহাসড়কে থ্রী-হুইলার চলাচলে তো মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা আমরা কার্যকরও করতেছি। প্রতিদিন মামলাও দিচ্ছি।
আপনাদের অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায় শুধুমাত্র চুনতি’র জাঙ্গালীয়া এলাকায়। এছাড়া পদুয়া,লোহাগাড়া, চুনতি এসব এলাকায় মহা সড়কের ওপর এবং দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিন চাকার যানবাহন সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা স্টেশন- এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেন না। আমরা আসতে দেখলে এই গুলো সরিয়ে দেওয়া হয়। আবার চলে গেলে, তখন আবার পুনরায় যানবাহন গুলো মহাসড়ক চলে আসে।