প্রতিনিধি ১৬ জুন ২০২৪ , ১০:৫২:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ প্রতিনিধি,পার্বত্য চট্টগ্রাম: প্রতি বছর ঈদ, নববর্ষ আর পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করতে সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় জমতো বান্দরবানে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় অঞ্চলটিতে পর্যটন বুকিং হচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানে পর্যটক সমাগম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
শান্তি সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত বান্দরবান। যেখানে সুউচ্চ পাহাড়, ঝর্ণা, মেঘ আর আকাশের সৌন্দর্য ও অবিরাম ছুটে চলা নদীর সৌন্দর্য বিমোহিত করে যেকোনো পর্যটককে। সরকারি যেকোনো বন্ধে তাই বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর পর্যটকবাহী যানগুলো বুকিং হয়ে যেত কয়েকদিন আগে থেকে। তবে এবারে ভিন্ন চিত্র বান্দরবানে। পার্বত্য এলাকার কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হঠাৎ তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের বুকিং নেই বান্দরবানে। এতে বড় ক্ষতি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও হতাশ হয়ে পড়েছে।
বান্দরবান সদরের আবাসিক হোটেল গ্র্যান্ড ভ্যালির ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন জানান, গত কয়েক বছর ধরে পর্যটক নেই। বিপুল ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। এবারের ঈদের ছুটিতে আমাদের কোনো রুম বুকিং হয়নি। যে পরিস্থিতি হয়েছে, এবার পর্যটক কম আসবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
আবাসিক হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস জানান, তাদের ৮৫ রুমের কোনোটিই এখনও বুকিং হয়নি। বছরের দুই ঈদের পর্যটকদের কারণে রুম দেওয়া কষ্ট হয়ে যেত। এবার চিত্র ভিন্ন। পাহাড়ের অবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকরা বান্দরবানে আসতে ভয় পাচ্ছে।
বুকিং নেই এ অঞ্চলের পর্যটকবাহী যানবাহনগুলোতেও। ঈদের বন্ধে এমন হাহাকার অবস্থায় হতাশ পর্যটকবাহী যানবাহনের মালিক আর শ্রমিকেরা।
পর্যটকবাহী গাড়ির চালক মো. কামাল জানান, আগের মতো ভাড়া নেই। ঈদের ছুটির কয়েকদিন আগে বুকিং হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু এবার হচ্ছে না। পর্যটকের খরার কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আলমগীর নামে আরেক চালক বলেন, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনার সংবাদে অনেক পর্যটক বান্দরবানে আসতে চাইছে না। পর্যটক না থাকায় অনেকে গাড়িগুলো বিক্রি কেরে দিচ্ছে। তাদের দাবি, পর্যটকদের বান্দরবানমুখী করতে প্রশাসন দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, গতবছর থেকে বান্দরবানে পর্যটক কমে গেছে। এতে আমাদের আবাসিক হোটেলগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে গেছে। আমরা ২৫-৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েও এখন পর্যটক পাচ্ছি না।
বান্দরবান মাইক্রোবাস জিপ-পিকআপ মালিক সমবায় সমিতির লাইন পরিচালক মো. কামাল বলেন, আমাদের পাঁশতাধিক পর্যটকবাহী যানবাহন রয়েছে। অন্যান্য বছর এসব গাড়ি বেশিরভাগ সময় বুকিংয়ে পড়ে থাকতো। এবার হচ্ছে না। এবারের ঈদের ছুটিতে কোনো গাড়ির বুকিং হয়নি।
তবে ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটকরা যাতে অনায়াসে বান্দরবানে ঘুরতে আসতে পারেন সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বান্দরবান জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক স্বপন কুমার আইচ বলেন, কয়েকটি উপজেলায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও অন্যান্যস্থানে পর্যটকেরা অনায়াসে ঘুরে যেতে পারবে। পর্যটকরা চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারবেন।