• কক্সবাজার

    ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্রতা দেখতে বেলাভূমিতে পর্যটক-দর্শণার্থীর ভিড়

      প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২৪ , ৯:৩৮:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    কক্সবাজার প্রতিনিধি: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ রিমাল। রিমালের প্রভাবে দেশের ১৬ জেলায় ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগে বৃষ্টি হওয়ার আশংকার কথা জানিয়ে রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে রিমাল বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ইতিমধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।




    অপরদিকে, রিমালের প্রভাবে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সৈকত ও উপকূলে পানির উচ্চতা বেড়েছে। ঢেউ উপচে পড়ছে তীরে। রিমালের এ তীব্রতা দেখতে সৈকতের তীরে ভীড় জমিয়েছেন কক্সবাজারে অবস্থান করা পর্যটক ও দর্শণার্থীরা। বেলাভূমির লাবণী, সী-গাল, সুগন্ধা, ওশান বিচ ও কলাতলী পয়েন্টে শত শত পর্যটক আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার উপস্থিতি লক্ষ্যকরা গেছে। অনেকে উপচে পড়া ঢেউয়ের সাথে মিতালি গড়ে গোসলে নামছে। সমানে তাদের উপরে নিরাপদ স্থানে উঠে আসতে তাগাদা দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের বীচকর্মী ও সৈকতে কাজ করা লাইফগার্ড কর্মীরা।

    শনিবার (২৫ মে) বিকেলেই আবহাওয়া অধিদফতর সতর্কতা জারি করে বলেছিল, রবিবার রিমাল ঘূর্ণিঝড় হতে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বেলা ১২টা হতে সেভাবেই আচরণ করছে প্রকৃতি। বেড়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঢেউ এবং বাতাসের তীব্রতা। বিপদ বোঝাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। এরপরও নির্দেশনা না মেনে সৈকতে গোসলে নেমেছেন অনেক পর্যটক ও দর্শণার্থীরা।

    সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা এবং লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, টানা কয়েক মাস তীব্র তাপদাহে ভোগা স্থানীয়রা একটু শীতলতার আশায় এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্রতা দেখতে সৈকতের তীরে এসেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি অনেক পর্যটকও এসে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। মাঝারি বৃষ্টিপাতে দাঁড়িয়ে শীতলতা অনুভবের পাশাপাশি সমুদ্র পরিস্থিতিও দেখছেন তারা।




    মানিকগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক দম্পতি ইব্রাহিম সায়মন বলেন, শনিবার কক্সবাজার এসে বিকেলে জানতে পারি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। তিনদিনের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে এসেছি, এখন চলেও যেতে পারছি না। আবার কবে আসবো নিশ্চয়তা নেই। তাই বৃষ্টি পেয়েই গোসলে নামতে এসেছি। তবে, অন্য দিনের চেয়ে ঢেউ অনেক বড় বলে মনে হচ্ছে। বীচকর্মী ও লাইফগার্ডরা পানিতে নামতে দিচ্ছেন না। গোসল করতে ব্যর্থ হলে খরচটা জলে যাবে!

    স্থানীয় ওয়াহিদ রুবেল বলেন, বিগত কয়েক মাস চরম তাপদাহে জীবন ওষ্ঠাগত ছিল। রবিবার দুপুর হতে একটু বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। সাথে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কি হচ্ছে তা দেখতে এসেছি। তবে, সমুদ্রে নামছি না- পাশাপাশি সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে উৎসাহ দিচ্ছি। কারণ নির্দেশনা না মানলে বিপদাপন্ন হতে হবে। সমুদ্রের বড় ঢেউ সত্যি উপভোগ্য।

    লাইফগার্ড রিফাত ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।অনেকে এক স্থানে বাধা দিলে অন্য স্থান দিয়ে নামছেন। রূঢ় আচরণও করা যাচ্ছে না। বিপদসংকেত বুঝাতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।




    আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১১ নম্বর বুলেটিনে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

    কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দুর্যোগের আভাস পেয়েই জেলায় ৬৩৮ টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ দু’লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দূর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখা হয়। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। দূর্যোগকালীন এ সময়ে মাঠে কাজ করছে ৮ হাজার ৬০০ জন সিপিপি এবং দু’হাজার ২০০ জন রেডক্রিসেন্ট সদস্য। উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি মতে ইউএনওরা কাজ করছে। শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি মিটিং শেষ করেই সিপিপি ও অন্য স্বেচ্ছাসেবক টীমগুলো সচেতনতা বাড়াতে উপকূলে মাইকিং নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মাঠে রয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টীম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।




    আরও খবর 30

    Sponsered content