• সাহিত্য

    আসুন সভ্য ও মানবিক মানুষ হই

      প্রতিনিধি ২১ মে ২০২৪ , ১১:২৯:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    প্রকৌশলী মাশুকুর রহমান চৌধুরী : আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের ভাবনাগুলো একসময় পরিবর্তিত হবে। এই যে আমাদের এত ঘৃণা তা একসময় ভালোবাসায় রুপান্তরিত হবে।
    ছোটবেলায় পড়েছিলাম অসির চাইতে মসি বড়। অস্ত্র দিয়ে সমাজে যে পরিবর্তন হয় না সেই পরিবর্তন কিন্তু কলম দিয়ে সম্ভব। আমাদের সন্তান, ছোট – ভাই বোনেরা এখন বই বিমূখ,প্রযুক্তিমুখী যা তাদেরকে প্রতিনিয়ত বিপদগামী করে তুলছে। অপসংস্কৃতি তাদেরকে গিলে খাচ্ছে, ভূলে যাচ্ছে তাদের ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।




    উইকিপিডিয়াতে বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফির চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ৩৩% ছাত্র ছাত্রী এতে আসক্ত।
    মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গিয়েছে যে দেশের প্রায় ৭৭ ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যে পর্ন ছবির আসক্তি আছে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে তারা আত্মিয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখেছে।

    দেশে শিশু যৌন নিপীড়নের মধ্যে ৬০ শতাংশ হয় অনাত্মীয়, প্রতিবেশী, শিক্ষক, বন্ধু। ৩০ শতাংশ হয় আত্মীয় মামা, চাচা, দাদা। এবং ১০ শতাংশ অপরিচিত।
    দেশের রাস্তাঘাটে, গনপরিবহনে এবং মার্কেট, শপিংমলের ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী যৌন হয়রানি এবং সহিংসতার শিকার হন। নারীদের মধ্যে সবচাইতে বেশি সহিংসতার শিকার হন পরিবারের বলয়ে প্রায় ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

    আচ্ছা এই যে এত পরিসংখ্যান কি মনে হয় এই যে এত নিপীড়নের কারণ কি?

    বই? নাকি প্রযুক্তির অপব্যবহার? নাকি অবক্ষয়?




    আমাদের দেশে আসলে বই পড়ে কয়জন, কিনে কয়জন?

    ইন্টারনেট, টিভির নানান চ্যানেল, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, ছবি এইসব কিছুই কি এর প্রধান কারন নয়?

    এখন কেউ পড়তে চায় না কষ্ট করে, রিল, ভিডি দেখে বেশী। সহজ, আনন্দদায়ক মাধ্যম।

    আজ পর্যন্ত কোথাও কি আন্দোলন হয়েছে এই দেশে সবার ইন্টারনেট কেন লাগবে? এই দেশে পর্ন সাইট কবে বন্ধ হবে, এই দেশে এতো চ্যানেলের কি দরকার? কেন এশিয়ার মধ্যে এই দেশে সবচাইতে বেশি ফেসবুক ব্যবহৃত হয়? এই দেশে কে চটি পড়ে নাই???

    হঠাৎ আমরা সবাই কেন একদম ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি না হয়ে গেলাম। তাই আমি বুঝি না।

    এখন আমরা কি দেখছি??? কি নিদারুন ক্ষোভ? বিদ্বেষ?




    আমাদের মেয়ে উনি নিয়ে গিয়েছেন? আমার পাত্রী উনি নিয়ে গিয়েছেন। উনি কেন আমার পাত্রী নিবেন?

    এই দেশে আপনার গাড়ি আছে। রাস্তায় কিছু একটা হয়েছে। সবাই আপনার উপর ঝাপিয়ে পরবে…

    তুই ব্যাডা কেন গাড়ির মালিক হইছিস? কেন বাড়ির মালিক হইছস? তোর বান্ধবী সুন্দর কেন? তোরে মানুষ চিনে কেন? তোকে তিনজন মানুষ কেন পছন্দ করে? তুই রেস্টুরেন্টে খাস কিভাবে? টাকা পাইলেন কই? তুই আমার জামাই নিয়ে গেছিস। তুই আমার বউ নিয়ে গেছিস। তুই আমার সন্তানের মাথা খাইছিস। তোর জামাই সুন্দর কেন? ভাল কেন? তোর ছেলে মেয়ে ভাল কেন? তুই সুস্থ কেন? তুই সুন্দর করে কথা বলিস কেন?

    কি নিদারুন ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ নিয়ে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি। শুধু একবার সুযোগ পেলে সব ছিড়ে ছুড়ে ফেলবো। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছি।

    প্রচার করে যাচ্ছি ঘৃণা ঘৃণা এবং ঘৃণা।

    আমি জানি না আমি ঠিক কিংবা বেঠিক কিনা।

    শুধু জানি আসুন অন্যকে অপমান, অপদস্থ না করি। কেউ আপনার কোন কিছু নিয়ে যায়নি। আপনি আপনার যোগ্যতায় তা অর্জন করবেন। এই যে চারপাশে এত ভাইরালের যুগ, এত সেলিব্রেটি। কিভাবে হচ্ছে? নিজে নিজেতো হচ্ছে না। হিরো আলম আরেকটু হলে দেশের এম পি হয়ে যেতো। ভাইরালদের আমরা ভাইরাল করছি। দোষ কার?




    আসুন ভালোবাসি মানুষকে, সবাইকে। সভ্য, মানবিক মানুষ হই। মায়া করি। ঘৃণা শুধু ঘৃণাকেই বৃদ্ধি করে। অন্যের সুখে সুখি হতে না পারলেও তাকে ছোট না করি। আমাদের যে জায়গা গুলো শান্তির জায়গা, আনন্দের জায়গা তাকে অবহেলা না করি, তাকে অপমান না করি। আপনি হয়তো ঠিক। হয়তো সেটা তার কোয়ালিটি হারিয়েছে। কিন্তু মাথা ব্যথা বলে মাথাতো কেটে ফেলা যাবে না। কিভাবে এটা আরো ভালো হবে সেই চিন্তা করি।

    একটা ঘৃণার সমাজ তৈরি না করি, অপমান, অপদস্থের সমাজ তৈরি না করি, অশ্রদ্ধার সমাজ তৈরি না করি।

    লেখক: প্রকৌশলীওে কলামিষ্ট।