প্রতিনিধি ২৯ অক্টোবর ২০২৩ , ৯:৪৮:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: নগরের অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা ব্যাটারি রিকশা ও অবৈধ হকার নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা।
রোববার (২৯ অক্টোবর) থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে চসিকের নির্বাচিত ষষ্ঠ পরিষদের ৩৩তম সাধারণ সভায় তারা দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ এবং অবৈধ হকারদের দৌরাত্ম্য রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেন।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর ব্রেক অত শক্তিশালী না, আবার ছোট বাচ্চারাও চালায় অনেক সময়।সঙ্গে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয়ের বিষয়টিতো আছেই। এজন্য সোলার রিকশা চালু করতে হবে।
আমাদের অযান্ত্রিক যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ার কাজ চলছে, এটি শেষ হলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আইনি কোনো বাধা আছে কিনা তা আমরা পর্যালোচনা করে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মিলে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো আছে সেগুলোকে সোলারচালিত হিসেবে রূপান্তর করে নিতে হবে। তবে, সোলার রিকশা চালু করলেও অল্প কিছু এলাকা ছাড়া মূল সড়কে এই রিকশাকে উঠতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রিকশার জন্যও লাইসেন্স চালু করতে হবে যাতে শিশুরা এসব না চালাতে পারে। আইনি কাঠামোতে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের সুযোগ থাকলে প্রাথমিকভাবে বহদ্দারহাট থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেব। পরে ধাপে ধাপে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিয়ন্ত্রণে আনব।
এ সময় কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিবেগের নিয়ন্ত্রক সেন্সর ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
চসিক, জনপ্রতিনিধি এবং ট্রাফিক বিভাগ সম্মিলিতভাবে কাজ করে হকারদের অবৈধ দখল ও ব্যাটারি রিকশা কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এবং জিইসি খুবই জনবহুল এলাকা। এ দুইটি এলাকায় ফুটওভার ব্রিজসহ শহরজুড়ে জেব্রা ক্রসিং বাড়াতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
মেয়র বলেন, হকার সবসময় ছিল। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ফুটপাতগুলো টাইলস করে দেওয়াই হয়েছে তাদের ব্যবসা করার জন্য। আর রাস্তায় ভ্যানগাড়ির কারণে প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে। হকারদের জন্য শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলেও ঢুকতে পারে না। অনেকে হকার পুনর্বাসনের কথা বলেন। আগে হকার পুনর্বাসন কোনো সুফল বয়ে আনেনি। এর আগে হকারদের জহুর হকার মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ পেয়েই অনেকে দোকান বিক্রি করে আবারো ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেন। এ কারণে শুক্র ও শনিবার আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার পক্ষে আমি।
পে-পার্কিং বিষয়ে মেয়র বলেন অভিযোগ পেয়েছি বেশ কিছু বড় মার্কেট কাস্টমারদের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেওয়ায় গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করায় প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলব এসব মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে। ইতোমধ্যে ডিসি ট্রাফিক আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা ঠিক করেছি চসিক ও ট্রাফিক বিভাগ একসঙ্গে পে-পার্কিং বাস্তবায়নে কাজ করবে এবং নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাবে।
সুপেয় জলের ব্যবস্থা করতে ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় লবণাক্ততার জন্য পানি খাওয়াতো দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছে না। আবার একসময়ের সুপেয় পানির উৎস পুকুর-দীঘিগুলোও নেই। এজন্য ওয়াসাকে জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমি কাউন্সিলরদের বলব, আপনাদের এলাকায় যেসব নালা-কালভার্টের নিচে ওয়াসা-টিঅ্যান্ডটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপ গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো অপসারণ করুন।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, সুপেয় জল সরবরাহে সক্ষমতা বাড়াতে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। চসিকের সাধারণ সভায় উথ্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। অনুমতি ছাড়া সড়ক কর্তনকারী ঠিকাদার ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইনের লিকেজ মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরাতন কিছু ওয়াসার পাইপ নালা ও বক্স কালভার্টের ভেতর ছিল সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশা নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ কেনা হয়েছে, বাড়ানো হচ্ছে জনবল। শুষ্ক মৌসুমে ৬ মাস কাজ করলে আগামী বছর ভালো ফল পাওয়া যাবে আশাকরি।
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।