• উত্তর চট্টগ্রাম

    মোবাইলে প্রেমের সূত্রে বিয়ে, পরকীয়ার বলী হয়ে ৪ বছর পর লাশ হলেন ফটিকছড়ির নুরজাহান

      প্রতিনিধি ১০ অক্টোবর ২০২৩ , ১১:২৭:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

    নুুরুল আবছার নুরী: চার বছর আগে ফটিকছড়ির লেলাংয়ের মেয়ে নূর জাহান মনির সাথে মোবাইলে প্রেম হয় রাউজানের যুবক মোহাম্মদ এনামের। একপর্যায়ে তাদের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর এনামের আসল রুপ দেখতে পান নুরজাহান।

    বিভিন্ন মেয়ের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো এনামের। এমনকি স্ত্রীর সামনেই মেয়েদের সাথে ইমোতে ভিডিও কলে অশ্লীল কথাবার্তা বলতো।আর বাধা দিলেই স্ত্রীর উপর অকথ্য নির্যাতন করতো।এরমধ্যে দ্বিতীয় বিয়ে করতে অনুমতি দিতে স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকে।আর এতে রাজি না হওয়ায় পাশবিক নির্যাতনের একপর্যায়ে স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যায়।শেষ পর্যন্ত ঘাতক এনামকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।




    সোমবার (৯ অক্টোবর) কুমিল্লায় আত্মগোপনে থাকা এনামকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব -৭ এর একটি টিম।

    মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে র‌্যাব-৭এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় র‌্যাব-৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার উপস্থিত ছিলেন।

    মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, এনামের সঙ্গে গত ৪ বছর আগে ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের হাসান আলীর মেয়ে নুর জাহান আকতার মনির সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্কের সূত্র ধরে রাউজান উপজেলার হলদিয়ার জানিপাথর এলাকায় এনামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। কলহের কারণ হলো এনামের পরকীয়া এবং দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাওয়া। স্ত্রী মনি পরকীয়া আপত্তি জানায় এবং দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দেয়নি। এজন্য তাকে গত ১ অক্টোবর নির্যাতন করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে স্বামী এনাম। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।




    তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে এনাম ওমান চলে যায়। বিদেশ থাকতেই তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানায় দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতির বিষয়টি। কিন্তু কেউ তাতে সায় দেয়নি। এনাম ওমানে চলে যাওয়ার পর স্ত্রীকে কোন রকম ভরণ পোষণ না দেয়ায় এবং পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং গত ২ বছর সেখানেঅবস্থান করে।

    গত ১৭ সেপ্টেম্বর এনাম ওমান থেকে তার বাড়ীতে চলে আসলে পরদিন ভিকটিম তার মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে আসে। ভিকটিম তার স্বামীর বাড়ীতে আসলে তার স্বামী তাকে পুনরায় নির্যাতন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এনাম ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন করলে ভিকটিম জখমপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে স্বামীর বাড়ীতে ফিরে আসে। ০১ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক ২টায় ভিকটিমের দেবর মোঃ ইকরাম ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে জানায় যে, “তার মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে যেন তাড়াতাড়ি তাদের বাড়ীতে আসে।”




    সংবাদ পাওয়ার পর ভিকটিমের পিতা-মাতা কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনসহ দ্রুত ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ীতে এসে ভিকটিমের মৃতদেহ বসতঘরের ভিতরের ফ্লোরে শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারে, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাদের গুদাম ঘরের ভিতরে ভিকটিম এবং তার স্বামী মোঃ এনামের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং এসময় ভিকটিমের আত্মচিৎকার শুনতে পায়। কিছুক্ষণ পর এনামকে একটি বস্তা কাঁধে নিয়ে উক্ত গুদাম ঘর হতে বের হয়ে যেতে দেখতে পায়। এর কিছুক্ষণ পর ভিকটিমের শ্বাশুড়ী ভিকটিমের ঘরে গিয়ে ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি আশেপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে ভিকটিমের মাথায় পানি ঢালে। পানি ঢাললেও কোন অবস্থাতেই ভিকটিমের জ্ঞান না ফেরায় প্রতিবেশীরা বুঝতে পারে যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে।




    বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত ভিকটিমের লাশের রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। মনির লাশের ময়না তদন্ত এবং পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রমানিত হয় যে, ভিকটিমকে তার স্বামী এনাম পাশবিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।

    উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় ঘাতক স্বামী এনাম’কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

    রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, এনামকে র‌্যাব রাউজান থানায় হস্তান্তর করেছে। মামলায় একমাত্র আসামি এনাম হলেও নিহত গৃহবধুর ওপর নির্যাতনে আর কারো সম্পৃক্ততা পেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




    আরও খবর 27

    Sponsered content