প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৩ , ১০:২৮:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: রাজধানীর উত্তরা থেকে বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী গাড়ি থেকে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দিনের আলোতে রাস্তা থেকে নজিরবিহীন এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নড়ে-চড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামে তারা।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যেই ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসসহ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় সাতজনকে।
ডিবি পুলিশ জানায়, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান চলছে।
যেভাবে ছিনতাই
পুলিশ সূত্রে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ছিনতাই হওয়া ওই টাকা টাকা পরিবহনে নিয়োজিত ছিল মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ সিরিয়ালের একটা নোয়াহ গাড়ি মিরপুর ডিওএইচএস থেকে টাকা নিয়ে সাভার ইপিজেডের উদ্দেশে রওনা দেয়।
গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস পার হয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে দিয়াবাড়ি মেট্রো স্টেশন পার হয়ে ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে যখন সামনের দিকে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে ডান থেকে বামে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় এবং গাড়িটির গতিরোধ করে।
প্রথমে ছিনতাইকারীরা হর্ন দেওয়া এবং সাইড না দেওয়া নিয়ে টাকা বহনকারী গাড়ির চালকের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর গাড়ির চালক ও সুপারভাইজারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। ছিনতাইকারী দলের একজন টাকার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসেন।
তিনি গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে কিছুটা সামনে নিয়ে দাঁড় করান। ওই সময় গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে মারধর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাড়িতে থাকা টাকার চারটি ট্রাঙ্ক নামান। কালো রংয়ের আরেকটি হাইয়েস গাড়িতে করে ছিনতাইকারীরা সেই টাকাভর্তি ট্রাঙ্কগুলো নিয়ে চলে যায়।
ছিনতাই শেষে গাড়িটি রাজউকের ভবনের পাশ দিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের রাস্তা হয়ে সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে ১০ নম্বর সড়ক হয়ে পালিয়ে যায়। এত বড় ছিনতাইয়ের সময় ছিনতাইকারীদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।
যেভাবে জানাজানি
ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় গাড়িতে থাকা ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে বিস্তারিত জানান। ৯৯৯-এর মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
ভুক্তভোগীদের বরাতে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, ছিনতাই করতে আসা গাড়িটিতে ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা আমাদেরকে জানিয়েছেন। তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না।
তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানে নামে পুলিশ
ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া গাড়িতে থাকা পাঁচজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার বিবরণ জেনে নেয় পুলিশ। একইসঙ্গে ছিনতাইয়ের শিকার গাড়িটিকেও পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের ধরতে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
৯ কোটি টাকা উদ্ধার, ডিবি হেফাজতে ৭ জন
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে খবর আসে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার বেশিরভাগ উদ্ধার করেছে ডিবি।
পরে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ জানান, উত্তরায় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, ছিনতাই হওয়া টাকাভর্তি চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়েছে। টাকা পরিবহনে নিয়োজিত মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দুজন পরিচালক ও গাড়িচালকসহ সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করা হয়েছে।
টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পরিকল্পিত জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের টাকা আনা-নেওয়ার বিষয়টি ছিনতাইকারীরা অনেক দিন ধরে ফলো করছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি।
প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের দুজন পরিচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার।
নিজেদের অবহেলা দেখছে না পুলিশ
উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানানোর জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। অথচ এতগুলো টাকা সকালবেলা এমন নির্জন স্থান দিয়ে সাভার নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আগে থেকে পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, ৫-১০ লাখের বেশি হলে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তারা তা করেনি। এখানে পুলিশের কোনো অবহেলা দেখার সুযোগ নেই।
ডিসি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি এমন টাকা স্থানান্তর করে, তাদের আরও সতর্ক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেউ টাকা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি, পুলিশ সবসময় প্রস্তুত।