প্রতিনিধি ১ মার্চ ২০২৩ , ১১:৪৪:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী : জঙ্গিদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে সমতল থেকে নিয়ে যাওয়া হতো পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য। বান্দরবানের বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে দেওয়া হতো প্রশিক্ষণ।
আর এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকতেন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও কেএনডি এর সভাপতি নাথান লনচেও প্রকাশ নাথান বমসহ এ বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের একাধিক নেতা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৪ সদস্যকে গ্রেফতারে পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান র্যাব।
গ্রেফতার শারক্বীয়ার চার সদস্য হলেন, পটুয়াখালীর দশমিনা এলাকার হোসাইন আহমদ (২২), কুমিল্লা সদর এলাকার নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২), খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার পার্থ কুমার দাস (২১) ওরফে আল আমিন।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার ৪ জনের মধ্যে হোসাইন আহমদ রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে। গত ২০২১ সালে সিরাজ নামে একজনের মাধ্যমে শারক্বীয়ায় যোগ দেয় সে। পরবর্তীতে সিরাজ তাকে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে যায়। সেখানে একে-৪৭ সহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেয় সে। গ্রেফতার আরেক সদস্য আল আমিনও কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতো। সেও ২০২১ সালে মাদ্রাসার এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে তথাকথিত হিজরতের নামে একই বছরের আগস্ট মাসে পরিবার থেকে নিরুদ্দেশ হয়। পরে ওই বছর নভেম্বরে শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে যায় এবং অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেয়।
হোসাইন আহমদ ও আল আমিন মাদ্রাসায় পড়া লেখা করলেও গ্রেফতার আরেক সদস্য নিহাল আব্দুল্লাহ ছিল এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। ২০২০ সালের শেষের দিকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কুবা মসজিদের সাবেক ইমাম হাবিবুল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয়। মূলত তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে নিহাল। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট তথাকথিত হিজরতের জন্য বাসা থেকে বের হয় সে। পরবর্তীতে শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সেও সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে সে একজন।
অন্যদিকে, পার্থ কুমার দাসের গল্পটা ভিন্ন। সে ২০১৮ সালে স্থানীয় এক ইমামের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পার্থ কুমার দাস থেকে হন আল আমিন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে সে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সে রাজধানীতে চলে আসে এবং সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি নেয়। সেও সিরাজের মাধ্যমে সংগঠনটিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করে।
বুধবার (১ মার্চ) র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল মো. মাহবুব আলম সংবাদিকদের জানান, প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হয়। এর পর শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে তাদের পাঠানো হয় বান্দরবানের গহীন অরণ্যে। যেখানে স্থানীয় বাকলাই পাড়া নামক এলাকার কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সেখানে তারা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন বিভিন্ন সময় কেএনএফ নেতা নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে এসে সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন। তাছাড়াও প্রশিক্ষণের অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ অর্থের বিনিময়ে যোগান দিত কেএনএফ।
র্যাব অধিনায়ক আরও জানান, পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবের অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। গত কয়েকদিন ধরে তারা সমতলে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সিএনজি অটোরিকশা যোগে চট্টগ্রাম আসার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাইপাস এলাকায় আসলে ৪ জনেক গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় জঙ্গি সংগঠনের আরও আরও ৪-৫ সদস্য পালিয়ে যায়।