• উত্তর চট্টগ্রাম

    বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প কৃৃষকের ভাগ্যলক্ষী

      প্রতিনিধি ১ জানুয়ারি ২০২৩ , ১:০৬:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

    মিরসরাই প্রতিনিধি: মিরসরাইয়ে একসময়কার বারোমাসি বাওয়াছড়া ছিল এলাকার মানুষের গলার কাঁটা। এই ছরার পানিতে বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যেত ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। তাই এ ছরাকে ‘অভিশপ্ত’ মনে করতেন এলাকার মানুষ। সেই বাওয়াছড়া এখন আর অভিশাপ নয়। ছরার উৎসমুখে তৈরি করা বাঁধেই বদলে দিয়েছে সব কিছু। বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প স্থানীয় প্রায় দুই হাজার কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।



    পানির অভাবে এক সময় চাষাবাদ করতে না পারা কৃষকরা এখন সারা বছরই ধান, রবি, শষ্য শাক-সবজি উৎপাদন করছে। এতে স্বাবলম্বী হয়েছে এলাকার প্রান্তিক কৃষকজনগোষ্ঠী। বওয়াছড়া প্রজেক্টে ধারণ করা পানি এখন এলাকার কৃষকের ভাগ্যলক্ষী। ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০০০ একর অনাবাদি জমিতে চাষ হয় এই পানি দিয়ে।



    বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্পের উপকারভোগী ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ ভৌমিক বলেন, বাওয়াছড়া প্রকল্পের ফলে বর্তমানে আমরা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমাদের এলাকার কৃষকরা প্রতিবছর সময়মতো প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো, আমন সহ বারোমাস শাক-সবজি চাষ করছে।



    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে উপজেলার ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ৩, ৫, ৬, ৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডের দুই হাজার কৃষকদের নিয়ে বাওয়াছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস) লিমিটেড গঠিত হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজেদের সঞ্চিত অর্থ থেকে কৃষকদের কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয় সমিতি থেকে। বাওয়াছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ নির্মাণ ও সুইচ গেইট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করেন। এলজিইডি ২০০৫ সালে ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। ৬০ শতক জমিতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি বারোমাসি বাওয়াছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ ও পানি আটকানোর জন্য রেগুলেটর স্থাপন করে।



    বাওয়াছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিডেট (পাবসস) এর সভাপতি আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে আগে বোরো চাষ হতো না। শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটে শাক-সবজি চাষ করা যেতো না। বাওয়াছড়া পানি প্রকল্পের কারণে বিগত ১৭ বছর ধরে প্রায় ২০০০ একর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। মূলত সমিতি পানি ব্যবস্থাপনার কাজ করেন।



    জানা গেছে, এলাকার কৃষি উন্নয়ন ও জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ২য় ক্ষুদ্রাকার সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সালে বাস্তবায়ন হয় বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প। এরপর থেকে এলাকার কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে এ প্রকল্পটি। লেকটি গত ১৭ বছর ধরে কৃষিকাজের চাহিদা জন্য পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে।



    মিরসরাই উপজেলা সহকারী কৃষ কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্পের কারণে ২০০০ হাজার অনাবাদি জমিতে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। প্রতি বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছি। লেকে সংরক্ষিত পানি দিয়ে রবিশষ্য সিসিঙ্গা, ঝিঙ্গা, লাউ, বরবটি, ধুন্দল, চিনাবাদাম চাষ করা হচ্ছে। প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো চাষ, আউশের বীজতলা প্রস্তুত, রবিশষ্য চাষের আওতায় এসেছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।’



    আরও খবর 27

    Sponsered content