প্রতিনিধি ৩০ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:৪৭:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: গুজবে কান না দিয়ে শ্রমিকদের কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। একই সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এমন গুজব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশিই নির্ধারিত হবে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বোর্ড নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করবেন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৈরি পোশাক শিল্প সেক্টরের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান।
মালিক পক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে নূন্যতম মজুরি কি তার থেকে বেশি হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, অবশ্যই বেশি হবে। পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়ে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি তার থেকে বেশি অবশ্যই নির্ধারণ হবে। মজুরি বোর্ড বসে আলাপ-আলোচনা করে নির্ধারণ করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ৫ বছরের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বসেছেন। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়েই নূন্যতম মজুরি কত হতে পারে তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আর শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। শ্রমিকদের কারা বুঝিয়েছে তাদের মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে। তারা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনো এক মাস বাকী আছে। ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা আছে। শ্রমিকরা কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বিধান করবেন আমি এই আহ্বান জানাই। কারও ফাঁদে যেন তারা পা না দেন।
গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকেও কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেটা হলো তারা সময় মতো বেতন ভাতা দেয় না, শ্রমিকদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায় এসব বিষয় আপনারা বিবেচনায় নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল যে মিটিং করেছি সেখানে লিমা ফেরদৌসীসহ অনেক শ্রমিক নেতা একথাগুলি বলেছে। তারমধ্যে খার্প ব্যবহারের বিষয়টি আসেনি। মারধরের বিষয়টি আসছে। তবে বেতন দিতে একটু দেরি করে সেটা মালিক শ্রমিক সমঝতা করেই করে। সেটা কিছু গার্মেন্টস মালিক এটা করে। ইত্যোমধ্যে গতকালই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কে ডাকবো। সেখানে শ্রমিক নেতারারো থাকবে। তাদের জিজ্ঞেস করা হবে কেন তারা শ্রমিকদের মারধোর করে। বেতন সময় মতো না দেয়া এটা শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট কর।
তিনি বলেন, মালিকের টাকা না থাকলে আরেকজন থেকে নিয়ে চালাতে পারবে। কিন্তু শ্রমিকের দুই মাস বেতন না হলে দোকানদারতো বাকি দেবে না, ভাড়া না দিতে পারলে ঘর থেকে বেড় করে দিবে। বর্তমান সরকারের আমলে শ্রমিকদের বেতন ১৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ হাজার টাকা, সেখান থেকে ৫৩০০ টাকা সেখান থেকে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। তারপর ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন হয়েছে। তাপরও বিভ্রান্তি ও রাজনীতি যেভাবে ঢুকে গেছে শ্রমিকদের মধ্যে। আমি বলবো আমার শ্রমিক ভাই বোনদের বলবো মার থেকে মাসির দরদ বেশি।
আপনাদের কাছে এমন কোন হিসেব আছে কিনা যে কতোজন শ্রমিক আন্দোলনে জড়িত হয়েছে, কতোটি গার্মেন্টস বন্ধ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটার সংখ্যা ভিত্তিক তথ্য এই মুহূর্তে তো দিতে পারবো না। এখন পর্যন্ত সেটা প্রতিবেদন আসেনি।
আজকে সাভারে একজন শ্রমিক মারা গেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খবরে সেটা দেখেছি। কি জন্য মারা গেছে সেটা এখনও আমরা জানতে পারি নাই। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। গার্মেন্টসে কোন শ্রমিক মারা গেলে দ্রুত খোজখবর নিয়ে থাকি। যেভাবেই মারা যাক নিজেরা গন্ডগোলে মারা যাক বা আন্দোলন করে মারা যাক বা ব্যাক্তিগত কারণে মারা যাক। এখানেও আমরা কেখবো প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবো।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মে দাম তাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কতো হওয়া উচিত বলে আপনারা মনে করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কি সম্ভব? আমি যেখানে বসে আছি এখান থেকে আমি এর উত্তর দিতে পারব না। নূন্যতম মজুরি বোর্ড এটা নির্ধারণ করবে।