প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১০:০৮:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: উন্নত দেশগুলোর মতো চট্টগ্রামেও নামতে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি স্কুল বাস। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রুটে চালু হতে যাচ্ছে এসব বাস।
এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ৭৮ আসন বিশিষ্ট ১০টি ডাবল ডেকার স্কুল বাসকে স্মার্ট বাসে রূপান্তরিত করার প্রকল্প নিয়েছে। ইতোমধ্যেই বাসগুলো শহরের পাঁচটি রুটে চলাচল করছে।বাসগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত করার জন্য একটি অ্যাপ বানানোর কাজও চলছে।
ওই অ্যাপে বাসে ওঠার পর শিক্ষার্থীর স্মার্ট কার্ডের সংকেতে চলা শুরু করবে বাসের চাকা। বার্তা যাবে অভিভাবকদের ডিভাইসে। যাতে লিখা থাকবে বাস ছাড়ার জায়গা ও সময়। শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নামলে অভিভাবকদের ডিভাইসে আরো একটি বার্তা যাবে, যাতে লেখা থাকবে বাস থেকে নামার সময় ও অবস্থান।
এছাড়া অভিভাবকরা বাসে ইনস্টল করা আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। একইসাথে জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে বাসের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারেন।
নিজেদের কাছে থাকা স্মার্ট কার্ডের ছোঁয়াতেই এখন থেকে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। বিকাশ বা নগদের মতো পরিচিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রিচার্জযোগ্য এই স্মার্ট কার্ডগুলো।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জামশেদ আলম রানা বলেন, আমরা স্কুল বাসগুলোকে স্মার্ট স্কুল বাসে রূপান্তরিত করার জন্য দেশব্যাপী প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর কাছে একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। প্রতিযোগিতায় জিতলে স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। একটি বাসকে স্মার্ট বাসে রূপান্তর করতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হবে। অ্যাপস তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এখন চলছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে এবং পরিষেবাটি চালু করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে নিউমার্কেট হয়ে চকবাজার-গনি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদিঘি কোতোয়ালি এবং অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২ নম্বর গেট-জিইসি-টাইগার পাস পর্যন্ত পাঁচটি রুটে ১০টি ডাবল-ডেকার বাস চালাচ্ছি। তা সত্ত্বেও নগরীর হালিশহর, বড়পোল, ইপিজেড, মোহরা এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলে স্কুল বাস নেই। আমরা বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছি। সেইসাথে রুটগুলোকেও সম্প্রসারণ করতে চাই।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “পাবলিক বাসে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের একা স্কুলে পাঠান না। অভিভাবকরা তাদের ব্যস্ত রুটিনের মধ্য থেকে সময় বের করে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ও নিয়ে আসার কাজটা করে। এই কারণে অনেক কর্মজীবী মা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্মার্ট বাস চালু হলে অভিভাবকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তারা আইপি ক্যামেরা এবং জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ”
“চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্পের মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রাখি আমরা। প্রকল্পটিকে একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি) আরো ১০টি বাস বরাদ্দ করার অনুরোধ জানিয়েছি। যেন রুট সম্প্রসারণ করা যায়। প্রকল্পটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন করবে, একইসাথে অভিভাবকদের সময় বাঁচবে। ”
সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দ ১০টি ডাবল ডেকার বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস চালু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এই বাসগুলো গত তিন বছর ধরে পাঁচটি রুটে ২ থেকে ৩ হাজার শিক্ষার্থী বহন করে চলেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামকে বদলে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েই দীর্ঘদিনের দখল হওয়া খেলার মাঠ রক্ষায় নিয়েছেন কঠোর পদক্ষেপ। খেলার মাঠ থেকে বিতাড়িত করেছেন মেলা। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন খেলার মাঠের আশপাশের অবৈধ সব স্থাপনা।
ইউনিয়ন পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০০টি খেলার মাঠ। পর্যটকবান্ধব নগর গড়তে চালু করেছেন পর্যটক বাস সার্ভিস। সেই সঙ্গে চালু করা হয়েছে হাফ ডে ও ফুল ডে পর্যটক মাইক্রো বাস সার্ভিস। স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার সমন্বয়ে প্রসূতি মাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে প্রতিনিয়তই। ২৩ সালের ২৩ লাখ বৃক্ষরোপণ। ডিসি পার্কে ফুলের উৎসব। স্টেডিয়ামের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। পলো গ্রাউন্ড মাঠ খেলার জন্য উন্মুক্ত করন। চট্টগ্রামকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করাসহ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। পর্যটন খাতে বিস্তর উদ্যোগ গ্রহণ। চিড়িয়াখানার উন্নয়নে ১০ একর খাস জমি উদ্ধার ও সীমানা বর্ধিতকরণ। হার্ট ফাউন্ডেশনকে ৩টি বাড়ি উপহার দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।