• মহানগর

    মানবিক চরিত্র গঠনেই উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব

      প্রতিনিধি ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ , ১০:৫১:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    0Shares

    চট্টবাণী: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী বলেছেন, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির ভালোবাসা, যে কাজগুলো করলে আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসেন। আর আল্লাহ যদি কাউকে ভালোবাসেন তাহলে আসমানে ফেরেশতাদের জানিয়ে দেন।

    আসমানের ফেরেশতারা জমিনের মানুষের হৃদয়ে একটা ভালোবাসা পয়দা করে দেন। একটি উন্নত রাষ্ট্র এই নয় যে শুধু ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়ন।
    ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের উন্নত মানবিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলেই এবং মানবিক চরিত্র গঠন করতে পারলেই একটি উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

    মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে (শহীদ রজব আলী ময়দান) ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের দ্বিতীয় দিনের প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

    তিনি বলেন, পৃথিবীতে ৮ শ্রেণির লোক আছে যাদের আল্লাহ তাদের কাজের জন্য ভালোবাসেন। পৃথিবীতে যেমন আমরা মানুষের ভালোবাসা চাই। আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে কোরআনে ৭ জায়গায় বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, দেশের যে নাগরিকরা আছেন তারা ভালো এবং সভ্য না হওয়ার কারণে দেশে পরিবর্তন হচ্ছে না। সুতরাং একটি কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য নাগরিকদের চরিত্র আগে পরিবর্তন করতে হবে। নাগরিকদের উন্নত চরিত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্য উন্নতমানের বান্দা হতে হবে।

    কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী বলেন, চট্টগ্রামের এই প্যারেড ময়দান শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হাতে গড়া ময়দান। তাঁর জীবনের যত আলোচনা সব আলোচনার মূল আলোচনা করেছেন এই ময়দানে। দীর্ঘ ৩২ বছর একটানা পাঁচ দিন করে আলোচনা করেছেন।

    তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী (রা.) বেঁচে থাকলে আজকে আমরা তাঁকে আবার পেতাম। আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদী একটি ইতিহাস। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাংলার জমিনে ইসলামী আইন কায়েম করা। আল্লামার সারাজীবনের আলোচনার মূল বার্তা ছিল সৃষ্টি যার আইন চলবে তার। আমরা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

    ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশার ও তাফসিরুল কোরআন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার বিভাগীয় দায়িত্বশীল মুহাম্মদ উল্লাহ’র পরিচালনায় মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের।

    মাহফিলে বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৬ বছর এদেশে অত্যাচার নির্যাতন স্বৈরাচার সবকিছুই আমরা দেখতে পেয়েছি। আজকের এদিনে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর কথা। যিনি ৫ দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল করেছেন দীর্ঘ ৩১ বছর। সেই কোরআনের পাখি ৩৫টি দেশে তাফসির মাহফিল করেছেন। এ তাফসির মাহফিলের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ হেদায়েত পেয়েছে। অনেক বিধর্মী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসেছেন।

    তিনি বলেন, কোরআনের শাসন চেয়েছেন বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আল্লামা সাঈদীকে চিকিৎসার নাম করে হত্যা করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যাদের ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে শুধু তাদের অপরাধ মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছেন। প্রিয় ভাইয়েরা ভয় পেলে চলবে না। মহান আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এমন কোনো নবী আসেননি যারা নির্যাতনের শিকার হননি। আজকে ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করবেন। নবীদের অনুসারী হিসেবে আমাদের জেল জুলুম সহ্য করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে আল্লাহর রাসূলকে অনুসরণ করতে হবে।

    মাহফিলে দ্বীনের আলোকে সমাজ পুনর্গঠনে নারীদের ভূমিকার ওপর আলোচনা করেন পুরাতন রেল স্টেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মামুনুর রশীদ।

    উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমদ মির্জা, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও আবুল হোসাইন, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার, সমাজসেবক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক নেতা মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যক্ষ বদরুল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, মাওলানা মহসিন আল হোসাইনী প্রমুখ। মাহফিলে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সূরকার ও গীতিকার চৌধুরী গোলাম মাওলা ও তার সাথিরা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নিবারের কণ্ঠশিল্পীরা।

    ইসলামি চিন্তাবিদ ও তাফসির বাস্তবায়ন কমিটির পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্যারেড ময়দান শহীদ আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত ময়দান। তার জীবনের দীর্ঘ ৩২ বছর কুরআনের তাফসির করেছেন। বিনা অপরাধে মেডিক্যাল কিলিংয়ের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকের মাহফিল থেকে সাঈদী হত্যার সাথে জড়িত সবার শাস্তি দাবি করছি। আল্লামা সাঈদী কোরআনের তাফসির করে পুরো চট্টগ্রামকে বিশ্ব মঞ্চে পরিচিত করেছেন। ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম প্রধান দেশ হয়ে ও ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে পারিনি। ১৬-১৭ বছর মানুষকে তাফসির মাহফিল শুনতে দেয়নি ফ্যাসিস্ট সরকার। শহীদ আল্লামা সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামিকে হত্যা করতে পেরেছে কিন্তু কুরআনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ইসলামকে ভালোবাসে, তাদের বুক থেকে কোরআনের ভালোবাসা দূর করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ ন্যায় ইনসাফের শাসন চায়। মানুষের গড়া কোনো আইন কানুন বা মতবাদ দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে পারে না। ইসলামের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হতে হবে। কারণ ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা রক্ত ঝরিয়েছে। আগামীর বিশ্ব হবে ইসলামের বিশ্ব। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। ইসলামি হুকুমাতের বাংলাদেশ। মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামের কোনো বিকল্প নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে ইসলামের কোনো বিকল্প নেই। অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে ইসলামের কোনো বিকল্প নেই।

    ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। কোনো ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশের মাটিতে ফেরত আসতে দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে যাতে আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদ ফেরত না আসে সেজন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

    0Shares

    আরও খবর 25

    Sponsered content