প্রতিনিধি ২ জানুয়ারি ২০২৫ , ১১:৩৩:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম ছয় মাসে ৩৫ হাজার ৯০৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৫২১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
এবার বেশি আদায় হয়েছে ২ হাজার ৩৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। দুই বছরের একই সময়ে তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কাস্টম হাউস শুধু রাজস্ব আহরণ করে না একই সঙ্গে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বন্ড সুবিধার মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্যের হুমকি ও চোরাচালান রোধসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। আমরা আশাকরি, আগামী ছয় মাসে আরও বেশি রাজস্ব আহরণ হবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যা এ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ০১ শতাংশ কম। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আদায় হয়েছিল ৫ হাজার ১০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে ১ হাজার ৪২৬ কোটি ০২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।
কাস্টম হাউস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা, দেশব্যাপী সপ্তাহখানেক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা কারণে, ডলার ও এলসি সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্বল ব্যাংকগুলোর নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক শূন্য কিংবা কমিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার ৫২৪ কোটি ৮৬ লাখ। এক্ষেত্রে আদায়ে ঘাটতি ৫ হাজার ৬২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। শতাংশের হিসাবে ১৩ দশমিক ৫৪। যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকদের আস্থা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে তাই আমদানি-রপ্তানিও ক্রমে স্বাভাবিক হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব আহরণেও গতি আসবে।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, আদায় হয় ৬ হাজার ৩১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা, আদায় ৬ হাজার ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, আদায় ৬ হাজার ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা, আদায় ৬ হাজার ৬১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, আদায় ৫ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, জুলাই বিপ্লব, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে মহাসড়কে অচলাবস্থা, একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের জাহাজ জেটিশূন্য করা, ডলার সংকট, এলসি সংকট, রুগ্ন ব্যাংক, শুল্কমুক্ত পণ্য বাড়ানোসহ নানা কারণে আমদানি কম হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে রাজস্বও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কিন্তু বেশি রাজস্ব আহরণ হয়েছে। আশাকরি সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন করলে কাস্টম হাউসও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে।