প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১০:৫৫:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ফ্যাসিস্ট সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করেছিল। এখন সেটা কিছুটা শিথিল হয়েছে।
তবে বর্তমান সাংবাদিকদের মধ্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং সিরিজ সাংবাদিকতা দেখতে না পাওয়ায় হতাশ হই আমি। এ ধরনের রিপোর্ট না হওয়ার কারণে সমাজে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ইত্যাদি বেড়েই চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী-২০২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এ কথা বলেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘বিপ্লব-পরবতী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের যেমন সংস্কার চাই’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক। এছাড়া ‘বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ. আলী আর রাজী।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চাকসু ভবনের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠিক পর্ব শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার এবং প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষীন করে চাকসু কেন্দ্রে এসে শেষ হয়। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াত এবং জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভার সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবিসাসে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়াজ মোহাম্মদ। এরপর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, চবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, চবি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট এজিএম নিয়াজ উদ্দিন, চবি পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন।
চবি উপাচার্য আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উচ্চ পদে অসীন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চবি ওয়েবসাইটে তাদের প্রকাশনাসহ অ্যাকাডেমিক তথ্য সংযুক্ত করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাংকিং সূচকে এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। উপাচার্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিটিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার কমিটি গঠন করায় অন্তবতীর্কালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে শিক্ষা সংস্কার কমিশন নামে একটি কমিটি গঠনের জন্য অন্তবতীর্কালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, চবি সাংবাদিকরা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মূল স্রোতে অবদান রেখে চলছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চবি সাংবাদিক সমিতির প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের বাইরেও প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সাড়ে পনের বছরের শাসনামলে সাংবাদিকদের চাপ প্রয়োগ করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তখন সরকারের জুলুম অন্যায়সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুুষও যোগান দিয়েছে। একটি রাষ্ট্রের চরিত্র যখন নষ্ট হয় তখন সাংবাদিক, আমলা, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়, এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিলো না।
চবিসাস সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের নিজেদেরকে ভেঙে নতুন করে গড়ার আন্দোলন। আমরা সংবাদের জন্য গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর ছিলাম। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে আমরা একেকজন ব্যক্তি একেকটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করেছি। চবি সাংবাদিক সমিতি একটি স্বতন্ত্র মিডিয়ার ন্যায় ভূমিকা রেখেছে। যে সাংবাদিক সমিতির পেজে শুধু বিবৃতি ছাড়া কিছু যেত না, সেই পেজ থেকে আন্দোলন চলাকালে আমরা প্রতিদিন লাইভ সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের খবর সারা বাংলাদেশের মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চবিসাসের সদস্যরা এই কাজ করেছে। আমাদের কলমের এ লড়াই সবসময় অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবিসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়াজ মোহাম্মদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন চবি সংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ্ আল নোমান, চবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রাষ্ট্রচিন্তা, চবি’র সভাপতি এসবি ফররুখ হোসেন রিফু ও চবি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের প্রতিনিধি ধ্রুব বড়ুয়া।
এছাড়া চবিসাসের সাবেক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ সদস্যবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ছাত্র প্রতিনিধিরা চবিসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করেন।