• জাতীয়

    ভুয়া বিল দেখিয়ে রেলওয়ের ৯৭ লক্ষ টাকা লোপাট!

      প্রতিনিধি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ১২:১৫:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

    বিশেষ প্রতিনিধি : রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পণ্য কেনার দরপত্র আহ্বান হয়নি। বিল পরিশোধ করতে পাঠানো হয়নি কোনো চিঠি। অথচ ভুয়া বিল দেখিয়ে ৯৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে এক ঠিকাদার। বিল যাচাই-বাছাই, চেক হস্তান্তর, ব্যাংকে জমাদান এবং উত্তোলনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তর (এফএঅ্যান্ডসিএও)।

    নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়েতে সব কেনাকাটা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে করতে হয়। সব বিভাগ তাদের চাহিদা পাঠানোর পর পণ্য ক্রয় করে স্টোরে জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বিল পাঠানো হয় বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে এফএঅ্যান্ডসিএও অনুমোদনের পর চেক ইস্যু করা হয়।




    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ইতিহাসে ভুয়া বিল করে প্রায় কোটি টাকা লোপাট এর ঘটনা এই প্রথম। যদিও অতীতে ক্যাশ লেনদেন হলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। গত বৃহস্পতিবার ( ৮ই ফেব্রুয়ারি) টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। তবে গত রবিবার ( ১১ই ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি রেল পাড়ায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

    নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছে নাবিল আহসান চৌধুরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার) কসমোপলিটন। জানা গেছে, পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কসমোপলিটন প্রতিষ্ঠানের মালিক নাবিলের পক্ষে চারটি বিল দাখিল করা হয়। বিলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অর্থছাড়ও হয়েছে কিন্তু ওই চারটি বিলের মধ্যে ৯৭ লাখ টাকার একটি বিল ছিল, কিছু ডকুমেন্টস পরিবর্তন করে সেই বিলটি পুনরায় দাখিল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার) কসমোপলিটন। যাচাই-বাছাই শেষে বিলটি পাস হয় এবং সীমান্ত ব্যাংকের নগরীর আগ্রাবাদ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি৷




    অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুয়া বিল দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে রেলওয়ে সি আর বির হিসাব ও স্টোরস শাখার একটি চক্র কাজ করেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।

    সুত্র মতে, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খানের ব্যক্তিগত সহকারী আসিফ এবং ওই অফিসের অস্থায়ী কর্মচারী হাবিব এই ঘটনার সাথে জড়িত।




    হাবিব রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক এক এফএঅ্যান্ডসিএওর ভাগিনা। সেই সুবাদে অস্থায়ী কর্মচারী হলেও তার কাছে অফিসের গোপন পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর হাবিব আত্মগোপনে চলে যায়। অবশ্য তাকে গতকাল অফিসে হাজির করা হয়েছে।

    এই ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা (ডিএফএ) জয়শ্রী মজুমদারকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি থানায় জিডি করা প্রস্তুতি চলছে। তবে তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।