প্রতিনিধি ১২ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৫৬:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি: বৃদ্ধ মা বাবার চিকিৎসার খরচ ও নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে দৈনিক চারশো টাকা মজুরিতে পন্য ডেলিভারির কাজ করছেন কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা। তার নাম সুমন মিয়া,খাগড়াছড়ির মহালছড়ি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। এর আগে ছিলেন এ শাখা কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য। চলতি বছরেই মহালছড়ি কলেজ ছাত্রলীগের মেয়াদউর্ত্তীন্ন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। উক্ত কমিটির সভাপতি করা হয় সুমন মিয়াকে।
জানা যায়, সুমন মিয়া মহালছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বসর মেম্বার পাড়ার আবদুল করিমের ছেলে। সুমনের পিতা একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও অসুস্থতার কারনে কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। তাই মা বাবাসহ ৩ সদস্যের পরিবারের হাল একাই ধরতে হয়েছে সুমনকে।
সুমন ২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করে এইচএসসিতে ভর্তি হন মহালছড়ি সরকারি কলেজে। একবছর পর অর্থের অভাব ও পরিবারের দ্বায়িত্ব কাঁধে চড়লে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় না খেয়ে দিন কাটিয়েছে সুমন মিয়া। তবে তার মনোবল কিংবা ইচ্ছাশক্তি হারায়নি। এতো সমস্যার মাঝেও রাজনৈতিক সকল প্রোগ্রামে নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত থেকে চাঙা রেখেছেন রাজনৈতিক মাঠ৷ ২০১৮ সালে বিএনপির অতর্কিত হামলার শিকারও হয়েছেন তিনি।
গত বছর ফের এইচএসসিতে ভর্তি হয় এ অদম্য মনোবলের অধিকারী সুমন। তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতৃত্বের মূল্যায়ন করে চলতি বছরে তাকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি করে জেলা ছাত্রলীগ৷
বৃহস্পতিবার সকালে পন্য ডেলিভারির সময় প্রতিনিধির সাথে কথা হয় সুমন মিয়ার। তিনি জানান, মা বাবার চিকিৎসা খরচ, নিজের পড়ালেখার খরচ ও সাংগঠনিক খরচ চালাতে দৈনিক চারশো টাকা মজুরিতে স্থানীয় এক পরিবেশকের পণ্য দোকানে দোকানে গিয়ে ডেলিভারি করে দেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করি বলেই সৎপথে রোজগার বেছে নিয়েছি।
মহালছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, সুমন তার পিতামাতা সহ একটি ভাঙা ঘরে থাকে।ফুটো চালে বৃষ্টির পানিতে ঘরে পানি ঢুকে। তার এমন দুরবস্থার কথা উপজেলার কমবেশি সকল নেতাকর্মীই জানে। কিন্তু সহযোগিতার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনা।
খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরা জানান, তিনি এ বিষয়ে অবগত ছিলেননা। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সুমনের পাশে দাঁড়াবে জেলা ছাত্রলীগ।
মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল জানান, সুমনের আর্থিক দুরবস্থার কথা তিনি জানেন। তার কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি সহযোগিতা করবেন৷ তবে সুমন কখনো সহযোগিতার জন্য আসেনি।