প্রতিনিধি ২২ জুলাই ২০২৩ , ১১:০৮:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: কোম্পানিটি একটি ইউজার-ফ্রেন্ডলি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যার মাধ্যমে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বাসের অবস্থান যেকোনো সময় ট্র্যাক করতে পারবেন। এছাড়া এই অ্যাপে পিক-আপ ও ড্রপ-অফ সময় নোটিফিকেশন দিয়ে জানানো হয়। বাসগুলোকে সর্বক্ষণ ট্র্যাক করা ও পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য জিপিএস প্রযুক্তি রয়েছে। তাছাড়া, প্রতিটি বাসে নারী গাইডও আছেন; যা স্বস্তি দিয়েছে অভিভাবকদের।
চট্টগ্রাম নগরীর আতুরার ডিপো বনানী আবাসিক এলাকা থেকে ইস্পাহানী স্কুলে আসা যাওয়ায় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফনান হোসেনের অভিভাবকের খরচ হতো প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকার বেশি। সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছানো, স্কুল ছুটি শেষে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থাকা, যানজট সহ ছিলো নানা ভোগান্তি।
ইস্পাহানী স্কুলের শিক্ষার্থীর স্কুল যাত্রার এসব ভোগান্তি দূর করেছে পিউপিল স্কুল বাস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির স্কুল বাস সার্ভিস নিয়ে প্রতিদিন সময়মতো স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারছে আফনান।
মাসে ৩৫০০ টাকায় যাতায়াত করতে পারায় প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে তার অভিভাবকের, কমেছে ভোগান্তিও।
আফনানের মতো চট্টগ্রাম নগরীর ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল, সেন্ট মেরীস স্কুল, বাওয়া স্কুল, আল-মাগরিব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী এখন পিউপিল স্কুল বাসের এই সেবা নিচ্ছে।
বাসগুলোকে সর্বক্ষণ ট্র্যাক করা ও পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য জিপিএস প্রযুক্তি রয়েছে। তাছাড়া, প্রতিটি বাসে নারী গাইডও আছেন; যা স্বস্তি দিয়েছে অভিভাবকদের।
অভিভাকরা জানিয়েছেন, অফিস করে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, আসায় নানা ঝামেলা পোহাতে হতো। সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ছুটির অপেক্ষায় স্কুল গেইটে অপেক্ষায় থাকতে হতো নারী অভিভাবকদের। এতে অভিভাবকের সময় নষ্ট হতো।
স্কুল ছুটির সময় সীমাহীন যানজট আর পরিবহন স্বল্পতায় বাসায় ফিরতেও দীর্ঘ সময় ব্যয় হতো। পিউপিল স্কুল বাস সার্ভিসের সেবা নেওয়া অভিভাবকদের সেই টেনশন দুর হয়েছে।
শিক্ষার্থী আফনানের মা ইস্পাহানী স্কুলের শিক্ষক রিনাত জাহান বলেন, “আফনানকে স্কুলে আনা নেওয়ার যে ভোগান্তি ছিলো তা দূর হয়েছে পিউপিল স্কুল বাসের মাধ্যমে। আমার সন্তান এবং অন্যান্য শিশুদের সাথে আমি নিজেও স্কুলে আসি। প্রতিষ্ঠানটির এসএমএস সিস্টেম, গাইড এবং সার্বিক সেবা খুবই ভালো।”
স্কুল বাস সার্ভিসের ধারণা যেভাবে এলো:
পিউপিল স্কুল বাস লিমিটেডের কার্যালয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা, সিইও ও চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ সোহাগের সাথে।
তিনি বলেন, “গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকায় দেখতে পাই মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে টেম্পু থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন এক অভিভাবক। বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যাথিত করে।”
“অফিসে এসে চিন্তা করি শিক্ষার্থীদের স্কুল যাত্রায় ভোগান্তি দূর করতে একটি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা অভিভাবকদের সাথে কথা বলি। তারা বলেন, গণপরিবহনে যাতায়াত করে সময় নষ্ট হয়, জীবনের ঝুঁকি থাকে,”
“এছাড়া পেশাজীবী অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে কর্মক্ষেত্রে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এতে কাজে মনোানিবেশ করতে পারেন না অনেক অভিভাবক,”
“এরপর আমরা চারজন মিলে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগে গত ফেব্রুয়ারিতে চালু করি পিউপিল স্কুল বাস,” বলেন সোহাগ।
বাস সার্ভিসের কার্যক্রম:
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ- ইস্পাহানী স্কুল, অক্সিজেন-ইস্পাহানী স্কুল, আন্দরকিল্লা- ইস্পাহানী স্কুল, চাঁদগাও আবাসিক – ইস্পাহানী স্কুল, আগ্রবাদ- জামালখান, বহদ্দারহাট- জামালখান রুটে ৬টি হাইয়েস মাইক্রোবাস এই সেবা দিচ্ছে পিউপিল স্কুল বাস সার্ভিস।
প্রতিটি গাড়ি দৈনিক ২টি ট্রিপ দেয়।
নন এসি সার্ভিসে ৩৪৫০ টাকা এবং এসি সার্ভিসে ৪৪৫০ টাকায় শিক্ষার্থীদের এই সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরেই চট্টগ্রাম নগরীর সকল রুটে স্কুল বাস সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। কয়েকদিনের মধ্যে প্রথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্ত হচ্ছে আরো দুটি হাইয়েস মাইক্রো।
এছাড়া আগামী জুলাইতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য চারটি বড় বাস যুক্ত হবে প্রতিষ্ঠানটির বহরে।
এসব বাসে বাওয়া স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, নাসিরাবাদ গার্লস স্কুল, এবং অংকুর সোসাইটির শিক্ষার্থী পরিবহন করবে।
এছাড়া ২০২৪ সালে রাজধানী ঢাকায়ও কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে পিউপিল স্কুল বাস সার্ভিস।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন ১৭ জন।
প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
কোম্পানিটি একটি ইউজার-ফ্রেন্ডলি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যার মাধ্যমে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বাসের অবস্থান যেকোনো সময় ট্র্যাক করতে পারবেন।
এছাড়া এই অ্যাপে পিক-আপ ও ড্রপ-অফ সময় নোটিফিকেশন দিয়ে জানানো হয়।
পিউপিল স্কুল বাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফুর রহমান চৌধুরী বলেন, তাদের কোম্পানি উচ্চ প্রশিক্ষিত ড্রাইভার এবং নারী গাইড নিয়োগ করে যারা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়।
“আধুনিক নিরাপত্তা ফিচার সমৃদ্ধ এই বাসে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম এবং সিসি ক্যামেরাও রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।