• বিনোদন

    কন্ঠশিল্পী তাপস দত্তের সংগীতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন

      প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২৩ , ১০:১৫:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    অরুণ নাথ: সংগীত বিষয়ে আরও একটা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন হলো। তিনি হচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় শাস্ত্রীয় তথা উচ্চাংগ কন্ঠ-সংগীত শিল্পী তাপস দত্ত।

    রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. চন্দ্রানী দাসের তত্ত্বাবধানে আগ্রা ঘরানা নিয়ে ২০২০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তাপস দত্ত। করোনা মহামারীর কারনে তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত ৮ মে ২০২৩ তারিখ কবিগুরুর জন্মস্থান জোড়াসাঁকো জমিদার বাড়িতে অনুষ্ঠিত বহু প্রতীক্ষিত এই সমাবর্তন অনুষ্ঠাতে তাপস দত্ত পিএইচডি এর শংসাপত্র লাভ করেন আনুষ্ঠানিকভাবে।




    সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক খুললেই ‘Tapash Datta’ বা ‘Darbare Music School of Tapash Datta’ সার্চ করলেই শুনতে পাওয়া যায় তাপস দত্তের শাস্ত্রীয় সংগীত, নজরুল সংগীত, ভক্তিগীতি, বাংলা গান এবং সংগীত শিক্ষার আসরের গান।

    পিতা-মাতার অসীম ইচ্ছা এবং বড় বোন পাপিয়া দত্তের কণ্ঠ সঙ্গীতের চর্চা ও বড়ভাই বিকাশ দত্তের তবলা সাধনায় অনুপ্রানিত হয়ে তাপস দত্তের সঙ্গীত জীবনের শুভ সূচনা অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন। বিনয়ী তাপস দত্ত তার শিক্ষাগুরুদের প্রসঙ্গে টেনে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত নাম গুলো বললেন, শ্রী উৎপল সেন, শ্রী অরুন চক্রবর্তী, শ্রী শ্যামল বসু, আনোয়ারা শৈলবাসিনী দিদিমনি সংগীত একাডেমীর অধ্যক্ষ, সেতারিয়া শ্রী সত্যজিৎ চক্রবর্তী, শ্রী স্বর্ণময় চক্রবর্তী, শ্রী তুষার দত্ত, ধ্রুপদিয়া শ্রী গৌরশরন দাশগুপ্ত, শ্রীমতি ডালিয়া রাহুত ও পণ্ডিত অরুন ভাদুড়ী।




    উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রতি অগ্রহী হয়ে উঠে সঙ্গীতের প্রাথমিক ধাপ শেষ করে জানা ও শেখার অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এসেছে আজকের তাপস দত্তকে।

    পিতা রনধীর দত্ত ও মাতা বানী দত্তের পুত্র তাপস দত্ত বানিজ্যে স্নাতক হবার পর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এম. কম পড়াকালীন বন্ধু রুবাইয়াৎ ফেরদৌস শাওন’র ঐকান্তিক সহযোগিতা ও অগ্রজ মনব্রত সাহার অনুপ্রেরণায় সকল গুরুজনদের অনুমতি ও আশীর্বাদ নিয়ে ২০০৪ সালে ভারতবর্ষে পাড়ি জমান ভারত সরকারের ‘আই সি সি আর’ এর বৃত্তি নিয়ে সংগীত বিষয়ে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে।

    ২০০৭ সালে বি মিউজিক (অনার্স) কোর্সে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০০৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রীয় কন্ঠ সংগীতে প্রথম শ্রেণীতে এম.এ পাশ করেন। পরে তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে কন্ঠ সংগীত বিভাগ থেকে ‘পিএইচডি’ ডিগ্রি অর্জন করেন।




    কলকাতা ‘আই. টি. সি. সংগীত রিসার্চ একডেমী’র স্কলার হয়ে গুরু পণ্ডিত অরুন ভাদুড়ীর তত্ত্বাবধানে উচ্চাঙ্গ কন্ঠ সঙ্গীতের শুরু-শিষ্য পরম্পরায় উচ্চতর তালিম গ্রহণের সৌভাগ্য হয় তাপস দত্ত’র।

    শ্রী দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত প্রতিযোগিতায়, শাস্ত্রীয় সংগীতে খেয়াল ও তারানা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাডেমীর ধ্রুপদ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও বঙ্গীয় সঙ্গীত কলাকেন্দ্রের স্বর্ণপদকে ভূষিত তাপস দত্ত।




    সিটিসেল চ্যানেল আই এওয়ার্ড প্রাপ্ত তাপস দত্ত ২০১২ সালে ক্লাসিক্যাল মেলোডি নামে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হলে তিনি দেশী বিদেশী শিল্পীদের সুনজরে আসেন এবং প্রচলিত বিভিন্ন রাগের উপর অ্যালবাম প্রকাশের জন্যে উৎসাহ বোধ করেন।

    বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ শ্রেণী এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ক’ শ্রেণীর উচ্চাংগ কন্ঠ সংগীত শিল্পী তাপস দত্ত দেশ বিদেশে সংগীত পরিবেশন করে গুণীজনদের সুনজরে আসেন।

    সংগীত পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশের, ভারত, কাতার ইত্যাদি দেশে।




    শিল্পী তাপস দত্ত এছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও অংশ নিয়েছেন। কলকাতার বিশেষ করে জ্ঞানবানী এফ এম, জে ইউ এফ.এম চ্যানেল, তারা মিউজিক, আকাশ আট, আমার চ্যানেল, ঢাকাতে চ্যানেল আই, আর টিভি, এন টিভি, মাছরাঙা টিভিতে সংগীত পরিবেশন করেন।

    বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উচ্চাংগ সংগীত প্রশিক্ষণ কর্মশালা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ দান করেছেন।




    নিজের প্রতিষ্ঠান দরবারি মিউজিক স্কুলের কর্ণধার ড. তাপস দত্ত সংগীতে শিক্ষকতা করেছেন শাখরি বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট (উস্তাদ রশিদ খান সাহেবের সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান), সুরের ধারা স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

    এছাড়া নিজের সাধনা আর দেশে-বিদেশে অনলাইন অফলাইন সংগীত শিক্ষার আসর নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ড. তাপস দত্ত।

    শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা ও প্রসারে ভূমিকা রেখে সমগ্র জীবন সঙ্গীত সাধনায় মগ্ন হতে চান তাপস দত্ত। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ছাড়াও লঘু সঙ্গীতে সমান পারদর্শী তাপস দত্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভক্তিগীতি, নজরুল, দেশাত্ববোধক, আধুনিক গানে মাতিয়ে রাখেন দর্শক শ্রোতাদের। শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা ও বিকাশে সুরের পথের যাত্রী ড. তাপস দত্ত’র শুভযাত্রায় প্রত্যাশা থাকবে অনিন্দ্য সুন্দর আগামীর।