প্রতিনিধি ১১ মে ২০২৩ , ১০:৩৬:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: পরিবহন সংকটে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে চট্টগ্রামের কর্মজীবী মানুষ। সপ্তাহের প্রথম বা শেষ কর্মদিবসে এই দুর্ভোগ বাড়ে।
চট্টগ্রাম থেকে আন্তজেলায় দিনে ৮টি রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) এর ২৭টি বাস চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এছাড়া পুরোনো বাসে অনুন্নত যাত্রীসেবা, বাসের এয়ারকন্ডিশন (এসি) বন্ধ থাকা ও গাড়ি রাস্তায় বিকল হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
পথের কষ্ট লাঘবে চলতি বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামে আরও ২০টি দ্বিতল বিদ্যুৎচালিত এসি বাস চালু করবে বিআরটিসি।
জানা গেছে, ভারতীয় ঋণ সহায়তা চুক্তির (এলওসি) আওতায় এসব বাস সংগ্রহ করা হচ্ছে। ১০০টি বাসের জন্য ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি টাকা। এর সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য বাসের মূল্যের ১৫ শতাংশ ৫৪ কোটি টাকা, সাতটি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য ৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বর্তমানে দেশে আমদানি হওয়ায় মোট যাত্রীবাহী গাড়ির প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই বিদ্যুৎচালিত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে এসব যানবাহন কিনতে সাধারণ গাড়ির চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দাম দিতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন আমদানিতে ৭২ শতাংশ শুল্ক এবং ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নেয়।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কষ্টসাধ্য হওয়া, চার্জিং স্টেশনের অভাব এবং ফসিল ফুয়েল গাড়ির তুলনায় বেশি দাম হওয়ায় বিদ্যুৎচালিত যানবাহন আমদানিতে গতি আসেনি। তবুও পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীবাহী গাড়ির বাজারে এই যান প্রাধান্য পাবে।
দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর থেকে টেসলা ও পোর্শের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রায় ২০টি বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।
বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে চার্জিং স্টেশনের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক স্থাপনে একটি কাঠামো প্রদানের জন্য ‘ইলেকট্রিক ভেহিকেল চার্জিং নির্দেশিকা’ প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে নিজস্ব বিদ্যুৎচালিত যানবাহন (ইভি) উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করায় স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে।
চট্টগ্রাম থেকে আন্তজেলায় দিনে চট্টগ্রাম-ঢাকায় ৬টি, চট্টগ্রাম-নোয়াখালীতে ১টি, চট্টগ্রাম-চাঁদপুরে ১টি, চট্টগ্রাম-কুমিল্লায় ৩টি, চট্টগ্রাম-সিলেট-সুনামগঞ্জে ৪টি, চট্টগ্রাম-রাঙামাটিতে ৬টি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-তবলছড়ি সড়কে ৫টি, চট্টগ্রাম-বরিশাল সড়কে ১টি বিআরটিসির ডিজেলচালিত বাস চলাচল করছে। এ ছাড়া শহর এলাকা এবং বিভিন্ন উপজেলায় কিছু বাস চলাচল করে।
প্রায় ৭ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা এবং কর্মজীবীসহ দুই উপজেলায় প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন অর্ধলাখ মানুষ। গত ১১ মার্চ থেকে এই রুটে চালু হয়েছে বিআরটিসির দুটি বাস সার্ভিস। পার্শ্ববর্তী পটিয়া রুটে বর্তমানে বিআরটিসির গ্যাসচালিত ১০টি বাস চলাচল করছে।
বিআরটিসি চট্টগ্রামে ১০টি স্কুলবাসও চালাচ্ছে। প্রতি মাসে এসব বাস থেকে ৪ লাখ টাকা আয় এবং প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। ব্যয়ের ঘাটতি পূরণ করতে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া কেপিএম এর কাগজ, বিসিআইসি’র সার পরিবহনসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রামে বিআরটিসির ২৮০টি ট্রাক চলাচল করছে। প্রতি মাসে পণ্য পরিবহন খাতে এক কোটি টাকার রাজস্ব আসে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসির বাস ডিপোতে চলাচলযোগ্য বাস রয়েছে ৬৯টি। ওয়ার্কশপে বিকল বেশকিছু বাস মেরামতের কাজ চলছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রামে বিআরটিসি বাস পরিচালনায় আয় করেছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মুনাফা হয়েছে প্রায় পৌনে ৮২ লাখ টাকা। ২০২২ সালে প্রতি মাসে বেতন খাতে গড়ে ৩৪ লাখ টাকা, জ্বালানি তেলে ৯৫ লাখ টাকা এবং টায়ার ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা।
বুধবার (১০ মে) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বছর নভেম্বর মাসে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটির বিআরটিসির বহরে ১০০টি বৈদ্যুতিক ডাবল ডেকার এয়ারকন্ডিশন বাস যুক্ত হবে। যার মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৮০টি এবং ২০টি বাস চট্টগ্রামে চলবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগ এবং জেলাগুলোর হেড কোয়ার্টারে এই ইলেকট্রিক বাস আমদানি করার প্রক্রিয়া চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবহৃত যানবাহনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক মোটরযান ক্যাটাগরিতে রূপান্তরিত হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোই হবে এর লক্ষ্য।