• মহানগর

    দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ মালবাহী জাহাজ মাতারবাড়ী বন্দরে নোঙর করেছে: বন্দর চেয়ারম্যান

      প্রতিনিধি ২৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৯:৩০:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    মু: হোসেন বাবলা: চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালু করতে কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান।

    ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এমভি সোঙ্গা চিতা ৯৫২ কনটেইনার রফতানি পণ্য নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করেছিল।

    এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট বিলম্ব না থাকায় ১২-১৫ দিনের মধ্যে ১০-১২ হাজার ডলার খরচে রফতানি পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন চূড়ান্ত গন্তব্যে যাচ্ছে।




    এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে ১৫-১৬ দিন, প্রতি কনটেইনারে সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার ডলার।

    মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে বন্দর দিবস উপলক্ষে শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বন্দর চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

    আজ বন্দরের ১৩৬ তম বর্ষপূর্তি(পোর্ট ডে ) উপলক্ষে তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগকে অটোমেশন করতে ৫০টি সফটওয়্যার মডিউল তৈরি হচ্ছে।

    যার মাধ্যমে বন্দরকে পেপারলেস প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে। বিপজ্জনক, তেজস্ক্রিয়, রাসায়নিক পণ্য নিরাপদে আমদানি রফতানির সুবিধার্থে স্টেট-অব-আর্ট কেমিক্যাল শেড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৬২ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। রফতানি কনটেইনার স্ক্যান করতে ২টি আধুনিক স্ক্যানার সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা ২০২৩ সালের জুন নাগাদ স্থাপন সম্ভব হবে। হামিদচরে লাইটারেজ জেটি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বন্দরের পাইলটদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ২১০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ১০ মিটার জাহাজ ভিড়ানো যাবে।




    হজযাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ বার্থিংয়ের সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর মোহনার তীরে ২০০ মিটারের যাত্রীবাহী টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে সমীক্ষা চলছে।

    বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার ২/৩দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন অ্যারাইবল বার্থিং দেওয়া হচ্ছে। ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিসহ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে বছরে সাড়ে ৪ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রার এ টার্মিনালে ২০০ মিটার লম্বা ১০ মিটার ড্রাফটের ২টি কনটেইনার জাহাজ এবং ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। টার্মিনালটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি অপারেটর দ্বারা পরিচালনার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পিপিপি কর্তৃক ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজর হিসেবে আইএফসিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ট্রানজেকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট দিলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।




    তিনি বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করায় কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ৫৫ হাজার টিইইউসে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩১০টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৮টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে বন্দরে। ইজি অব ডুয়িং বিজনেসের সব সূচক আমরা দ্রুত অর্জন করেছি।

    ট্রানজিট ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষম। ইতিমধ্যে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের কয়েকটি ট্রায়াল রান সফল হয়েছে। কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন করেছি আমরা। বন্দরের বার্থিং ডিজিটালি হয়ে থাকে। এটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
    মাতারবাড়ী চ্যানেলে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যে নির্মিত জেটিতে ১২০টির বেশি জাহাজ বার্থিং সম্পন্ন করেছি। আজ বিকেলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ২৩০ মিটার লম্বা ও ১৩ মিটার ড্রাফটের ৮০ হাজার ডিডব্লিউটির কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়ানো হবে। এ বন্দরে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে বেশি কার্গো আসলে ভাড়া কমবে, আয় বাড়বে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হবে মাতারবাড়ী। আমাদের তিনটি সমুদ্রবন্দর ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলো এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।




    বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে।

    তিনি বলেন, বে টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ কাজ যথেষ্ট এগিয়েছে। নিষ্কণ্টক জমি নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে পেতে যাচ্ছি।

    ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট দীর্ঘ ৩১ লাখ ৪২ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৯৬ লাখ টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ৩৬১টি।

    সভায় বন্দরের বোর্ড সদস্য, পরিচালক, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থেকে বন্দর চেয়ারম্যান কে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কে নব নির্মিত পতেংগা টার্মিনালের বার্থিং নিয়োগ দেয়া যাই কিনা সেটা নিয়েও আলোচনা সভায় মতামত জানান উপস্থিত বৃন্দরা।




    আরও খবর 25

    Sponsered content