প্রতিনিধি ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:১৪:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক : নবাগত মডেল-অভিনেত্রী তাসনিয়া রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক জসীম আহমেদ। সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে প্রোপাগান্ডা ও নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগে তার নামে মামলার করেন এই প্রযোজক।
বুধবার (০৫ এপ্রিল) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৫ ও ২৯ ধারায় প্রযোজক জসিম মামলার আবেদন করেন বলে তার আইনজীবীরা জানান।
এদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মডেল তাসনিয়ার বিরুদ্ধে মামলার আবদনের কথা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল ও শাহেদুল আজম জানান, বিচারক পরে আদেশ প্রদান করবেন।
আল মামুন রাসেল বলেন, ‘জসীম আহমেদের সাথে তাসনিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আর এই সম্পর্কের অব্যবহার করেছে তাসনিয়া। তার নামে মিথ্যা মামলাও করেছে সে। এছাড়া কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পরিচালক ও প্রযোজকের নামে নানা মিথ্যা জিনিস প্রকাশ করছে যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৯ ধারায় অপরাধ। ’
অ্যাডভোকেট শাহেদুল আজম বলেন, ‘এই মডেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে সে ব্লাকমেইলের চেষ্টা করে। সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে সাধারণত এই ধরণের প্রতারণায় শিকার হওয়া ভিক্টিম মুখ খোলেন না।
পরিচালক-প্রযোজক জসিম আহমেদকে বিষয়টি নিয়ে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করার জন্য সাদুবাদ জানান এই আইনজীবী।
শাহেদুল আজম আরও বলেন, ‘মডেল তাসনিয়া একটা পর একটা সিরিজ অব ওফেন্স করেই যাচ্ছে। যা তার ফেসবুক পাতা দেখলে বোঝা যায়। তার চরিত্র ও লাইফ স্টাইল সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে তার ফেসবুক পাতায়। তার মতো মেয়েরা যখন কোনো প্রমিনেন্ট মানুষের বিরুদ্ধে লাগে তখন বোঝা যায় তার কোনো উদেশ্য আছে। আমরা সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনালে মামলা করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব। ’
এদিকে তাসনিয়ার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জসিম আহমেদের বেশকিছু ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে একটি বাসায় ছুরি হাতে নিজের গলায় ধরতে দেখা যায় জসিম আহমেদকে এবং অন্য একটি ভিডিওতে একটি প্রাইভেটকারের ভেতরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। যেখানে প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন জসিম আহমেদ।
এ ভিডিও প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জসিম আহমেদ বলেন, ‘সে আমার সাথে যখনই মিট করেছে গোপনে এমন ভিডিও রেকর্ড করেছে। সে আমার বাসায় এসে ভাংচুরের চেষ্টা করলে আমি ইমোশনালি বোঝানোর জন্য আমার নিজের গলায় ছুরি রাখি। সে সময় মেয়েটিকে আমার মাতাল মনে হচ্ছিল। সে যখন আমার বাসায় অনেক ভাংচুর করছিল আশেপাশের লোকজন চলে আসবে এ জন্য আমি তাকে বোঝানোর জন্য কিচেন থেকে ছুরি আনি। ’
ওইদিনের কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে কি না প্রশ্নে জসিম আহমেদ বলেন, ‘আমার বাসায় ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে। কিন্তু আমি ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর তার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজসহ ভিডিও পোস্ট করতে দেখেছি। এছাড়া এই ঘটনার ১দিন ও দুদিন পর ২০২০ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট তার ফেসবুক প্রকাশিত ছবিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে কোনো হোটেলে ঘুরছে এমন ছবি দেখেছি। তার বহু রূপ, এতে আমিই এলোমেলো হয়ে গেছি। ‘
এদিকে ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনালের পিটিশন মামলা নং- ৩০৫/২০২০ এর তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি পুলিশ আবিষ্কার করে তাসনিয়া রহমান একজন পেশাদার ব্ল্যাকমেইলার যার কাজ হলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করা। সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসার আল মাহমুদ হোসেনের করা তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তানজিম তাসনিয়া নিজেকে একজন মডেল পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তাদের সুনাম ও খ্যাতি বিনষ্ট করে বড় অংকের অর্থ আদায়ের জন্য সমাজের বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক, মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন ও হয়ারানীমুলক মামলা দায়ের করেন। তাসনিয়া কতৃক দায়েরকৃত প্রত্যেকটি মামলার ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
২৪ মে ২০২১ এ দাখিল করা এ প্রতিবেদনে তাসনিয়ার দায়ের করা কয়েকটি মিথ্যা মামলার উদাহরণ দেয়া হয়। এর মধ্যে আছে আমজাদ হোসেইনের বিরুদ্ধে বিগত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ গুলশান থানায় দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা নং- ১০ (০২) ২০২০। এই মামলাটি তদন্ত করে সত্যতা না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তাসনিয়ার শিকার হয়েছেন একজন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিকও। ঢাকার মেজিস্টেট কোর্ট ২৯ এ তাসনিয়ার দায়ের করা সি আর মামলা নং ৩২৯/১৯ এ তাসনিয়া আসামী করেন টেলিভিশনের মালিক হাসান ভৌমিককে। পিবিআই তদন্ত করে এই মামলার সত্যতা পায়নি।
সাইবার আদালতে তাসনিয়ার দায়ের করা মামলাটি ছিল মূলত তার আরেক শিকার ইফতেখার আলম ও আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। সিআইডি বলছে, তাসনিয়ার সাথে ইফতেখারের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তারা এক সঙ্গে ৩ বার ভারত, ৩ বার থাইল্যান্ড এবং দুইবার মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেন। বিমানের টিকিট, হোটেলে অবস্থান, কেনাকাটা, রুপচর্চা এবং উপহার বাবদ তাসনিয়ার পিছেনে ২০ লাখেরও বেশি টাকা খরচ করেন বলে সিআইডি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।