প্রতিনিধি ২৩ মার্চ ২০২৩ , ৯:০৪:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ না করলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য রোগের মতোই বাড়ছে। গত এক বছরে চট্টগ্রামে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৯১ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত এক বছরের চট্টগ্রাম জেলায় সর্বমোট ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। তার মধ্যে ক্যাটাগরি-১ অনুযায়ী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন ও পূনঃ আক্রান্ত যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮ জন।
এর মধ্যে ৬৬৬ জন শিশু যক্ষ্মা রোগীও রয়েছে। শনাক্তকৃত মোট যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ফুসফুস আক্রান্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৫ জন ও ফুসফুস বর্হিভূত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৬ জন। জেলায় চিকিৎসাপ্রাপ্ত যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ৯৭ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে ৬ হাজার ৩৯৬ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয়। এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। সরকারের আন্তরিকতায় দেশের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যক্ষ্মা রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা-সেবা পাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মা রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রীও রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। পরিবারে যক্ষ্মক রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে যক্ষা নির্মূল সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, মস্তিস্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যক্ষ্মার সংক্রমণ হতে পারে। যক্ষ্মা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সঙ্গে রক্ত যায়। আমাদের এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষ্মা হয়না।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে। এখন যক্ষ্মা হলে রক্ষা মেলে।
সিভিল সার্জন বলেন, নিয়মিত, ক্রমাগত সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষা ভালো হয়। কোভিডকালীন সময়ে যক্ষা কার্যক্রম সাময়িক ব্যাহত হলেও ২০২২ সালে সে অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল, বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট (এনটিপি) ডা. বিপ্লব পালিত, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মো. নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফএম জাহিদ ও নাটাব’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।
এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের উদ্বোধন করা হয়। এরপর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি আন্দরকিল্লা হয়ে পুনরায় সিভিল সার্জন অফিসে এসে শেষ হয়।