প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১০:১৭:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাথে চট্টগ্রামের অন্যান্য সেবা সংস্থগুলোর মধ্যে কার্যক্রমের সমন্বয় না হলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারি চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ২৫তম সাধারণ সভায় মেয়র এ মন্তব্য করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চসিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। তবে, সেবা সংস্থাগুলো যদি চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।
‘ওয়াসা চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য রাস্তা কাটবে। শুধু ওয়াসা নয় যে কোন সংস্থা রাস্তা কাটার আগে অবশ্যই চসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং যথাযথ প্রাক্কলনের মাধ্যমে চসিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে রাস্তা কাটতে হবে। আমরা রাস্তা বানাবো আর কোন সংস্থা রাতের আঁধারে নতুন রাস্তা কেটে ফেলবে এমন কোন অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নিব।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে টানেল থেকে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করায় চট্টগ্রামের সন্তান এবং মেয়র হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় নাগরিক সেবা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চসিকের নিজস্ব ফান্ডে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করব। প্রকল্প কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে একজন ঠিকাদারকে এক টেন্ডার নোটিশে একাধিক কাজ দেয়া হবে না। আর যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে পারবেনা তাদের কালো তালিকাভুক্ত করব। আমি কঠোর না হলে পিসি রোড হতোনা। ঝুঁকি নিয়ে কঠোর হয়ে পিসি রোডের কাজ শেষ করেছি। অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ঠিকাদারদের ছাড় দিবনা। কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করছি কারো গাফিলতির জন্য জনদুর্ভোগ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব।
সভায় প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরসহ চসিকের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ সময় আলোচনার প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। রাজস্বের আয়ের অর্থকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে প্রাধিকারের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সড়ক ও ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো সংস্কার করা হবে। বিশ্বব্যাংক থেকে ২৭৫ কোটি টাকার কোভিড রেসপন্সের অর্থকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে আমাদেরকে। ‘কেবল বস্তুগত উন্নয়ন নয়, সার্বিক উন্নয়নের জন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেরও বৃদ্ধি প্রয়োজন। এবার চসিক অন্য বছরগুলোর তুলনায় আরো বড় পরিসর বইমেলার আয়োজন করেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ম্যুরাল নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের নামে সড়ক ও স্থাপনাসমূহের নামকরণ করব। মানুষের অবসর সময়কে আনন্দময় করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে নান্দনিক নগর গড়ব।’
সভায় একাধিক কাউন্সিলর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ করায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে সিডিএকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা গৃহকর নিয়ে একটি কুচক্রিমহল গুজব ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
জবাবে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা হ্রাসে যে প্রকল্প পরিচালনা করছে, সেখানে রিটেনিং ওয়ালের কারণে নালা-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেকগুলো এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি সিডিএ চেয়ারম্যানসহ সিডিএ’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি যাতে এ প্রকল্পের জন্য বর্ষায় মানুষ কষ্ট না পায়। তবে, সিডিএ থেকে এখনো কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখছিনা। গৃহকর নিয়ে কারো আপত্তি থাকলে আপিলের মাধ্যমে কর নেয়া হচ্ছে। জনগণ গৃহকর দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছে। সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন।
সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।