প্রতিনিধি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:৩৭:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুল জলিল,খুলনা অফিস: যশোরের বেনাপোল-পেট্রাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে বসেছে দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা। দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই বাংলার মানুষ একই মঞ্চে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষার জয়গান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে আজ মঙ্গলবার এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার বাংলা ভাষাপ্রেমী মানুষ।
আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালী বাংলাভাষী মানুষের পাশে। ভাষা দিবস মিলিয়ে দিলো ‘এপার-ওপার’। ভাষার টানে শহীদদের প্রতি সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানালো ভারত-বাংলাদেশ। ফুলে ফুলে ভরে গেলো সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদি।
বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারো ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হলো। মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা আর গানে গানে মাতোয়ারা হলো দুই বাংলার একই আকাশ একই বাতাস। উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা।
এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল দু-দেশের হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ। উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। দুই দেশের জাতীয় পতাকা, নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। দুই বাংলার মানুষের এ মিলন মেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরই দুই বাংলার সীমান্তবর্তী এ অংশের বাসিন্দারা এক সঙ্গে মিলিত হয়ে দিবসটি মনের মাধুরি দিয়ে পালন করেন।
তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য।ফুলের মালা, মিস্টি ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ। বাঙালীর নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। দুই বাংলার মানুষের মাঝে বসে এক মিলন মেলা।
এ সময় পেট্রাপোল-বেনাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার নারী পুরুষের । ক্ষনিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা। মঙ্গলবার ৯ টায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক শ্রীমতি বীনা মন্ডল, বনগাও পৌরপ্রধান শ্রী গোপাল শেড, সাবেক সাংসদ মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বে ভারত থেকে আসা শতশত বাংলা ভাষী মানুষ বাংলাদেশিদের ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেয় একে অপরকে। নোমান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সরকারের স্থাণীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য, ভারতের পশ্চীমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক , বিশেষ অতিথি ৮৫ যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন,২১ উদযাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু ,আব্দুল হাকিম(কমিশনার,কাষ্টমসহাউজ,বেনাপোল) মোঃ সেলিমুজ্জাহা ৪৯বর্ডারগার্ড বিজিবি যশোর,আব্দুল জলিল,পরিচালক ট্রাফিক প্রশাসন,বেনাপোল স্থলবন্দর,নিশাত আল নাহিয়ান সহকারী পুলিশ সুপার নাভারণ সার্কেল যশোর ও অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল(যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শার্শা উপজেলা আ.লীগ,ঝিকরগাছা চৌগাছার সাবেক সংসদ মনিরুল ইসলাম,ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ,বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক মুকুল,সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুল ইসলাম, বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন ভূইয়া, শার্শা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ আকিকুল ইসলাম, ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ হাসান হাবিব, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সুধিজন, সাংবাদিক সামাজিক রাজনৈতিক গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
ভারতের পে বিশেষ অতিথি বনগাও পৌর সভার মেয়র শ্রী শংকর আঢ্য, উওর ২৪ পরগনা জেলার মেন্টর গোপাল শেড সহ অনুষ্ঠানে উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অংশ নেয়। দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে।
এসময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। উভয় দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি এখনো যে অটুট রয়েছে তাই বোঝা গেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বাংলার অতিথিদের বক্তব্যে। এরপর ভারতীয় মন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশের চেকপোস্টের মঞ্চে।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বক্তারা বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আজ মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে।দুই দেশের নেতৃত্বে এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা হবে। তাদের ভাষা ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের দুই দেশের মধ্যে উপস্থিত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করবে। পৌর সভার মেয়র শ্রী গোপাল শেড বলেন, আপনারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য এতো ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারোর নেই। এ জন্য আপনারা গর্বিত জাতি। ভাষার টানে আমরা বাংলাদেশে ছুটে এসেছি একুশ উদযাপন করতে। দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলার মধ্যদিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হবে।
আমার এসেছি অন্তরের টানে। বার বার ছুটে আসি। দেশ বিভক্তি হলেও ভাষার পরিবর্তন হয়নি। আমরা ওপারে থাকলেও শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। একুশের মঞ্চে কবিতা আবৃতি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দুই বাংলার নামি-দামি শিল্পীরা ২১ এর সংগীত পরিবেশন ও আবৃতি করেন। ভাষা শহীদদের স্মরণে দুই বাংলার মানুষের সম্প্রতিআর ভালোবাসার বাধনকে আরো সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় ভাষা প্রেমিদের মিলন মেলা।
সমগ্র অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য
বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ বাঁশের বেষ্টনি দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টের নোমান্সল্যান্ডে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী মানুষ।