• সারাদেশ

    কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম যশোরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে

      প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:০১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    মো: আব্দুল জলিল.খুলনা অফিস: সম্প্রতি দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলীয় যশোরের বিভিন্ন উপজেলার শার্শা,বেনাপোল,ঝিকরগাছা চৌগাছা,মনিরামপুর,বাঘারপাড়া,অভয়নগর,কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বা গ্রাম এলাকার অনেক স্থানে ঘুরে দেখা গেলো গ্রামীণ জনপদের বাড়ি বাড়ি কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে।



    প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাসকলাই ও চাল-কুমড়োর বড়ি তৈরি নারীদের ব্যস্ততা দেখা মেলে। শীতের উপাদেয় যতই বাড়ছে কুমড়া বড়ি তৈরীতে মা,মেয়ে শাড়ীর দিন দিন ব্যাস্ততা বেড়ে চলছে। মাসকলাই ভিজিয়ে রাখার পর সেটি দিয়ে ডাল তৈরি করার পর। পাকা চাল কুমড়ো ঝুরি মত কোরায়ে ও মাসকলাই ডাল এক সাথে মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়।

    গ্রামীণ এলাকার ৭০/৮০ ভাগ মহিলা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজটি করে থাকেন। বছর পাঁচেক/ছয় আগে ঢেকিঁ ও শীল পাটায় বেটে বড়ি তৈরির কাজটি করা হলেও এখন তা আধুনিকতার ছোয়ার সেই মেশিনের মাধ্যমে কাজটি সেরে ফেলা হচ্ছে অতি অল্প সময়ে।এতে অবশ্য বড়ি দেয়ার কাজটি বেশ সহজ হয়েছে। তবুও পাটায় বেটে বড়ি তৈরীর প্রচলন এখন বিরাজমান রয়েছে গ্রামাঞ্চলের মাঝে।



    ঝিকরগাছার,শংকরপুর,কুলবাড়ীয়া গ্রামের বিউটি বেগম/শাপলা খাতুন জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়,এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে,তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে,ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে,পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে,এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে,খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে, যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়,তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে।

    বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।



    ছোটপোদাউলিয়া গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম জানান, মূলত এই বড়ি তৈরি করা হয় শীতের সময়। এ অঞ্চলের নারীরা এই বড়ি তৈরি করতে কয়েক মাস পূর্বে থেকে চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। এরপর মাসকলাই দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবারের অংশ বিশেষ কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাসকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন। মাসকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়ি। কুমড়োর বড়ি তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। রাত জেগে শীলপাটায় কেজি কেজি ডাল বাটা সহজ কাজ নয়। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। নিজেরা খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়। তবুও মুখরোচক খাবার আর আত্মীয়তার জন্য এটি করতে হয়। এখানেও একটা বাড়তি আনন্দ রয়েছে।



    বাগআঁচড়া, শংকরপুর ফেরিঘাট বাজারের ব্যবসায়ি সাইদুর রহমান, ফজলু রহমান জানান, মুদি ব্যবসায়/কাচা বাজার তৈরকারির পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করেন তারা। অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন শীতকালে বড়ি তৈরির জন্য। গেল বছর একডজন বড়ি ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে হয়েছে ৮০/৯০ টাকা। বড়ি তৈরির উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়ে গেছে।



    বাগআঁচড়া ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খান হাসান আরিফ আহমেদ লিটন ও বাগআঁচড়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোঃ শাহিনুর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদনে জানা যায়, গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যর মধ্যে কুমড়োর বড়ি অন্যতম। শীতকালে কুমড়োর বড়ি তৈরি না করলেই যেন তরকারীর স্বাদ বুঝা জায়না। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারীরা পালা করে অনেক সময় বড়ি তৈরি করে থাকে। এতে প্রতিবেশিদের মধ্যে যেমন সম্পর্ক দৃঢ় হয় তেমনি বড়ি উপহার দিয়েও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট থাকে।



    আরও খবর 4

    Sponsered content