• মহানগর

    চট্টগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার তবে পরিবেশ বিপর্যয় চোখে পড়ার মতো

      প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২২ , ১০:১৩:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

    0Shares

    মো: নুরুল কবির: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হলেও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বেষ্টিত চট্টগ্রামে রয়েছে পাহাড়, নদী ও সাগরের মেলবন্ধন যার পাড় জুড়ে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জনপদ। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত সভ্য এ শহর মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট আমদানি রপ্তানির ৯০ ভাগ এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। ইউরোপ ও আরব দেশের বণিকরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই এ দেশে আসেন এবং ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। যার ফলশ্রুতিতে হাজার বছর ধরে চট্টগ্রাম পুরো দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা পালন করছে।



    বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে অর্থনৈতির নতুন দুয়ার পাশাপাশি ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশ বিপর্যয় যা চোখে পড়ার মতো। গড়ে উঠেছে উন্নত মানের জুটমিল, স্টিলমিল, ঢেউ টিন, এমএস রড, সার, চিনি, ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা, পাওয়ার প্রজেক্ট, সিমেন্ট, গার্মেট, টেক্সটাইল, স্পিনিং মিল, ভোজ্যতেল রিফাইনারি, এলএনজি প্রজেক্ট, জ্বালানি তেল রিফাইনারি, ফিড মিল, ফুড প্রসেসিং কারখানা, গাড়ি নির্মাণ কারখানা, শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিংসহ অসংখ্য ছোট-বড় শিল্পকারখানা।



    চট্টগ্রামে বহু আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউনিলিভার, রেকিট বেনকিজার, বার্জার পেইন্টস, জিএসকে, কাফকো ও ইয়ংওয়ানসহ অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কারখানা। এখানে রয়েছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিন একাডেমি ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ অসংখ্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ। এখানে রয়েছে রেল স্টেশন, রেল মেরামত কারখানা এবং দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। গড়ে উঠেছে ইপিজেড, ট্যাংক টার্মিনাল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও ডিপো।



    চট্টগ্রামেই অবস্থিত দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ঘাঁটি। এসবের পাশাপাশি চট্টগ্রামে রয়েছে বিরাট এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ পর্যটন এলাকা। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, ফয়’স লেক এবং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এলাকার বিভিন্ন লেক ও পাহাড়ি দৃশ্য পর্যটনের স্থায়ী নিদর্শন। কক্সবাজারে অবস্থিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অসাধারণ সৌন্দর্য চট্টগ্রামের গুরুত্বকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।



    সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বছরের পর বছর ধরে দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম অনন্য এক ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রামের ভূমিকা অসামান্য ও অপরিসীম হলেও চট্টগ্রামের উন্নয়ন কিন্তু এখনো কাঙ্খিত মানের হয়নি।

    চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়নের বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের রয়েছে যেমন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালী ইকোনমিক জোন, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভার এবং চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল প্রকল্প।



    এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন বাস্তবায়ন প্রকল্প সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র এক ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে। এসব মেগা প্রজেক্ট ছাড়াও চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরো বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব মেগা প্রকল্প আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এসব প্রকল্পের সুবাদে চট্টগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টির ফলে সুফল পাবে পুরো দেশ। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা অপরিহার্য। বর্তমান সরকার সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, দেশের মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীতকরণসহ এসব প্রকল্প পুরো দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নেরই অংশ।



    উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চলমান মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার পুরো চিত্রই বদলে যাবে এবং আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন এবং উন্নত এক যুগে প্রবেশ করব। আর এই উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে নেবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পূর্ণ গতিতে চলতে থাকবে। তবে ভাবনার বিষয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে। পাহাড় কর্তনের ফলে পাহাড় ধস বেড়েই চলছে।



    চট্টগ্রাম শহরের সব থেকে প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা, জাহাজ কাটা শিল্পের ফলে সমুদ্র বন্দরে দূষণ চোখে পড়ার মতো। শহরের খাল গুলো শুকিয়ে গেছে দখল করেছে হায়নারা, নির্বিকার প্রশাসন। সবুজায়ন বৃদ্ধি করার জন্য খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায় না। তবে কি উন্নয়ন প্রকল্পের মায়াজালে পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনবে আগামী প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত?



    লেখক: মোঃ নুরুল কবির
    সম্পাদক ও প্রকাশক: সাপ্তাহিক চট্টবাণী
    সাধারণ সম্পাদক:সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

    0Shares

    আরও খবর 25

    Sponsered content