প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২২ , ৯:৪২:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
এইচ এম ওসমান সরওয়ার: শুরু হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বে বাজছে ফুটবলের দামামা। উড়ছে ভিনদেশি পতাকা, কাঁপছে দেশ। বৎসরের শীতের শীতল হাওয়ার হিমেল পরশে শিশির ভেজা শীতল পরশে গরম স্পর্শ ‘ফুটবল ফুটবল’ বলা বিশ্ববাসী। হাওয়া বয়ে বেড়াচ্ছে ফুটবল ফুটবল বলে চিৎকার করে দেশজুড়ে। যেখানেই যায় সেখানেই ধ্বনিত হচ্ছে ফুটবল ফুটবল। তাই বলা চলে আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ, কাঁপছে দেশ।
ফুটবল বিশ্বকাপ আসলেই আমাদের দেশে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ উত্তেজনা ও উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে। যে যেখানেই বসে প্রিয় দলের পক্ষে সাফাই গাইতে বিন্দুমাত্র আলসেমি করেনা। একদল সমর্থক অন্যদলের সমর্থকদের ট্রল করতেও ছাড়ে না, চলে একপ্রকার স্নায়ু যুদ্ধ। প্রিয় দলের পতাকা উড়িয়ে জার্সি গায়ে পরে এমনকি গেইট নির্মাণ, গাড়ি-বাড়ি রং করে জানান দেওয়ার চেষ্টা করে নিজ দলই সবার সেরা।
এছাড়া বড় পতাকা তৈরীতেও চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। কেউ জার্সি পরে নিজের ফেইসবুক প্রোফাইলে দিয়ে জানান দেওয়ার চেষ্টা করে তিনিই বড় ভক্ত। আবার কেউ পরিবারের সবাই একই দলের জার্সি পরে জানান দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের পছন্দের দলই সেরা। নিজ দলের জয়ে আনন্দ মিছিল, নাচানাচি, লাফালাফি ও খাবারের আয়োজনসহ সব আয়োজন করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্যবোধ করেনা সমর্থকরা। শিল্পীরাও মনের মাধুরী মিশিয়ে হরেকরকম গান ধরে।
বাসায়, অফিসে, দোকানে, স্টেশনে বা বাজারে খেলা দেখার বিশেষ আয়োজন থাকে। হাটবাজার, দোকানপাট, ফুটপাত ও মার্কেটে চলছে পতাকা ও জার্সি বিক্রয়ের ধুম। হাঁটতে-চলতে গাড়িতে কিংবা বাড়িতে যে যেখানে যায় শুধু ফুটবল নিয়েই যেন সব তর্ক। কেউ বলে পেলে সেরা আর কেউ বলে ম্যারাডোনাই সর্বকালের সেরা।
বর্তমানে মেসি, রোনালদো ও নেইমার নিয়ে তর্কাতর্কিতে পার করে ঘন্টার পর ঘন্টা। তারপরও শেষ হয়না নিজ সমর্থন করা দল বা খেলোয়াড়ের পক্ষে যুক্তিতর্ক। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চলে যুক্তিতর্ক, তারপরও শেষই হয়না বাকবিতন্ডা। নিজ দলের জয়ের আনন্দ-উল্লাস মাতামাতি হোক তাতে আপত্তি নেই।
কিন্তু অচেনা অজানা এক দেশকে ভালবাসতে গিয়ে প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এমনকি আপন ভাইয়ের সাথে মারামারি, ঝগড়া বিভেদ ও খুন পর্যন্ত করে ফেলি। এমন বিবেক গর্হিত কাজ করা সুস্থ মানসিকতার কারো কাম্য নয়। আবার নিজ দলের পরাজয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ করতেও দেখা যায়। সবার উচিত হবে খেলা দেখে আনন্দ করা, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আমাদের দেশে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানী, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড ও পর্তুগাল ইত্যাদি দেশের সমর্থক বেশি দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি সমর্থক দেখা যায় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল ফুটবল দলের।
এই দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করাসহ বিভিন্ন কিছু করতে দেখা যায়। কিন্তু তর্কাতর্কি ও নিজ দলের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ঝগড়াঝাটি, মারামারি ও খুনখারাপির মতো জঘন্য অপরাধ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনা। সবার উচিত হবে খেলা দেখে আনন্দ করা, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা, জয়-পরাজয় মেনে নেয়া।
সর্বোপরি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলোর চেয়ে নিজের জীবনকে ভালোবাসা। ফুটবল বিশ্বকাপ আসবে যাবে কিন্তু কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় কারো প্রাণ গেলে আর ফিরে আসবে না।
লেখক: সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও ক্রীড়ামোদী।