প্রতিনিধি ৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ১১:৫৯:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল হবেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কারা ফটকের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব ওই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমানোর জন্য এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। আমি বিশ্বাস করি,গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলন সফল হবেই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ’
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালাও’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সাদা গাড়িতে করে বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
গাড়ির ওপর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপরই ক্রিম রঙের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস।
তিনি গাড়ির ওপর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা বলছি, আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা বলছি, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলছি, আমরা বাজারদরের কথা বলছি। এটা কী আমাদের অন্যায়? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় করিনি, কোনো পাপ করিনি। এই সরকার আমাদেরকে একে একে বেশ কয়েকবার কারাগারে নিয়েছে, আমাদের সময় থেকে বঞ্চিত করেছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আজকে আমাদের মুক্তিটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে বন্দি আছে। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা আপনাদের আমি বর্ণনা করতে পারবো না এই মুহূর্তে। ওই নেতাকর্মীরা কী অবস্থায় আছেন এক আল্লাহ জানেন, মা’বুদ জানেন। আর আমরা দেখে এসেছি। এই সরকারের কাছে আশা করাটা খুব মুশকিল। তারপরেও বলব, আপনারা (সরকার) এই কারাবন্দিদের প্রতি দয়া করে একটু বিবেকবান হবেন, বিবেককে কাজে লাগান। একটু দেখে যান তারা কেমন আছে? একটা জেলখানার মধ্যে তারা কেমন করে থাকেন।
তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, সরকার বলেছে- আমি পত্রিকায় দেখেছি, তারা মানবিকতার কথা বলেছেন। আমরা সরকারকে বলব, এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হোন। এরা চোর নয়, এরা ডাকাত নয়। এরা সব রাজনৈতিক কর্মী। ওরা দেশের মানুষের কথা বলে বলেই আজকে কারাগারে।
কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই নেতা।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিকেল থেকে কারামুক্ত নেতাদের অপেক্ষায় ছিলেন। মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সেখানে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান। সেখানেও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস।
এর আগে, রোববার (৮ জানুয়ারি) সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখলে ওই দুই নেতার মুক্তির পথ খুলে যায়।
কেরানীগঞ্জের কারাগারে মুক্তির সময়ে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিনী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
কারা ফটকের বাইরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, ইউনুস মৃধা, শায়রুল কবির খানসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।