প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২৩ , ১১:০০:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাধুলা ডেস্ক: তাই বলে লড়াইটাও করবে না! এমন আফসোস ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। দল তো হারবেই।
বাংলাদেশও টানা ৪৯ ম্যাচ জিততে পারেনি আরও বছর কুড়ি আগে। তখনও কি এমন লড়াই ছাড়াই হেরেছিল? উত্তর পাওয়া মুশকিল।
কারণ লড়াই ব্যাপারটা তো চোখে দেখা যায় না, পরিসংখ্যানেও তালিকাভুক্ত করা নেই। কিন্তু এখনকার বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের যে শরীরী ভাষা- সেটি দেখতে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার নেই। এমনই হাল, বিশ্বাস করা কঠিন। টানা চার ম্যাচ হেরে আসা পাকিস্তান দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখালো, ৭ উইকেটে জিতেও গেলো। এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে বাংলাদেশের।
স্বপ্নের চিঠির নতুন ঠিকানা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ এখন বেশ সংশয়েই পড়ে গেলো তাই। শুরুতে তাদের দেওয়া ২০৫ রান তাড়া করতে পাকিস্তানের ১০৫ বল খেলতেই হয়নি।
রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে শুরুতে কিছুটা ‘থ্রেট’ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। মাঠের ক্রিকেটের সঙ্গে ইডেনের গ্যালারি থেকেও ভেসে আসছিল চিৎকার। তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের টানা দুটি মেডেন ওভারে আসার পালে একটু-আধটু হাওয়াও লেগেছিল।
কিন্তু প্রথম উইকেট যখন বাংলাদেশ পেয়েছে, ততক্ষণে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে ম্যাচের ভাগ্য। ২২তম ওভারে এসে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৯ বলে ৬৮ রান করে আব্দুল্লাহ শফিককে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে।
এরপর বাংলাদেশ আরও উইকেট পেয়েছে। কিন্তু তাতে ম্যাচের ভাগ্য বদলায়নি। কেবল ফখর জামান হয়তো একটু আফসোস করতে পারেন, সেঞ্চুরিটি করা হয়নি তার। আর মিরাজ খুশি হতে পারেন আরও দুটি উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিয়ারে ১০০ উইকেট পূরণ করায়।
৩ চার ও ৭ ছক্কার ইনিংসে ৭৪ বলে ৮১ রান করা ফখরকে তাওহীদ হৃদয়ের ক্যাচ বানান। আর ১৬ বলে ৯ রান করে লং অনে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে বাবর আজম ক্যাচ দেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম স্পেলে বাংলাদেশ উইকেট হারায় দুটি। প্রথম ওভারেই তানজিদ হাসান তামিমকে আউট করেন আফ্রিদি। ৫ বলে শূন্য রান করে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিলেও আম্পায়ারস কলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার বোলিংয়ে এসে এবার নাজমুল হোসেন শান্তকে আউট করেন আফ্রিদি। একটি চার মেরে আত্মবিশ্বাস দেখানোর আভাস দিলেও ৩ বলে ৪ রান করে ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো উসামা মিরের হাতে ক্যাচ দেন। বিশ্বকাপে সাত ম্যাচের ছয়টিতেই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি শান্ত।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম হারিস রউফের শিকার হলে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। ৮ বলে ৫ রান করে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। ২৩ রানে তিন উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বরবারের মতো দারুণ কিছু শট খেলেন লিটন, তাতে আশা বাড়ে বাংলাদেশের। তাদের জুটিও ছিল দারুণভাবে। কিন্তু ৬ চারে ৬৪ বলে ৪৫ রান করে ইফতেখার আহমেদের বলে শট খেলতে গিয়েও ব্যাটের ফেস অফ করে দেন, এরপর মাথায় লেগে ক্যাচ যায় আগা সালমানের হাতে।
৬৪ বলে ৪৫ রান করে আউট হওয়ার পর প্রায় আধামিনিট একইরকমভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিশ্বাসেই করতে পারছিলেন না লিটন, ছাড়তে চাইছিলেন না মাঠও। ৮৯ বলে ৭৯ রানের দুর্দান্ত এক জুটিরও অবসান ঘটে তাতে। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গী হন সাকিব আল হাসান।
শুরুতে কিছুতেই রান তুলতে পারছিলেন না তিনি। বহু চেষ্টার পরও দেখা মিলছিল না সিঙ্গেলসের। ওই চাপ কিছুটা পড়ে মাহমুদউল্লাহর ওপরও। তার স্ট্রাইক রেট কমে যায়, পরে হন আউট। আফ্রিদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ বলে ৫৬ রান করেন তিনি।
সাকিব এরপর ব্যাটিংয়ে কিছুটা ছন্দ খুঁজে পান। ৫৩ বলে ২৬ রান করার পর ৩৭তম ওভারে ইফতেখার আহমেদকে টানা তিন বলে বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু ওই ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। হারিস রউফের বলে আগা সালমানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪ চারে ৬৪ বলে ৪৩ রান করে আউট হন তিনি।
মাঝে বাদ পড়া তাওহীদ হৃদয় সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। তিন বলের মধ্যে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে আউট হন। উসামা মীরকে ছক্কা মারার পরের বলে আবারও তুলে মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। আট নম্বরে নামা মিরাজ ৩০ বলে ২৫ রান করেন। পাকিস্তানের হয়ে তিন উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এই হারে ৭ ম্যাচে ২ পয়েন্ট টেবিলের নয়ে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ কম খেললেও রানরেটে পিছিয়ে থাকায় তলানিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।