• জাতীয়

    ৩৭ শতাংশ শুল্ক স্থগিত, যা ভাবছেন উদ্যোক্তারা

      প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২৫ , ৯:১৯:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    0Shares

    চট্টবাণী ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আগামী তিন মাস বাড়তি শুল্ক গুনতে হবে না রপ্তানিকারকদের।

    যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে রপ্তানিকারকরা বাড়তি সময় পাবেন এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছানো যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য প্রবেশে রপ্তানিকারক দেশগুলো যেমন সুবিধা পাচ্ছিল, আমদানিকারক দেশটির ভোক্তারাও কম দামে পণ্য পাচ্ছিলেন। এতে ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। তুলনামূলক কম দামের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানোর ফলে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি রাজস্ব পাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানিকারক দেশগুলোকে ঘায়েল করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ চাপে পড়ে। একই সময়ে কানাডা, ব্রাজিল, ইতালি, জাপান, ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কেও তাদের টানাপোড়েন তৈরি হয়। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের ওপর পড়ে বাড়তি শুল্কের কাষাঘাত।

    এ অবস্থায় বুধবার (৯ এপ্রিল) তিন মাসের জন্য নতুন শুল্কনীতি স্থগিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর রয়েছে। নতুন আরোপিত শুল্ক স্থগিত করা হলেও আগে নির্ধারিত শুল্কসহ ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা হবে (১৬+১০) ২৬ শতাংশ।

    বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক আপাতত স্থগিত করলেও সরে আসেনি। সরে আসবে বলেও মনে হয় না। এটা কার্যকর করবেই। তার আগে তিন মাস সময় দিয়ে চীন বাদে অন্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখতে চায়, যাতে দেশগুলো সময় পায়। আবার এসব দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ওইসব দেশের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে ছাড়ও দিতে পারে।

    তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় বহুপাক্ষিক ইস্যুকে একপাক্ষিক বিষয়ে পরিণত করে একা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। অতীতে (সত্তরের দশকে) ডলারের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন অজুহাত তুলেছিলেন মার্কিন ডলারের অবমূল্যায়ন হওয়া ও ডলারের ওপরের বাড়তি চাপ সৃষ্টি হওয়া। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো এটা মেনে নিতেও বাধ্য হয়েছিল। অথচ সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল বহুপাক্ষিক। এবারও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহুপাক্ষিক বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে একই কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

    যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিবিরুদ্ধ। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের দেশে দেশে শেয়ার বাজারে ধস নামে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সেখানকার আমদানি নির্ভর বাজার ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেছে। যে কারণে চীন বাদে অন্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

    বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকলে প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ২৪০ মিলিয়ন ডলার লোকসান গুনতে হতো, তিন মাসে যার পরিমাণ ৭২০ মিলিয়ন ডলার হতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের গুনতো হতো বাড়তি মূল্য। আগে রপ্তানি করা পণ্য, যা পথে আছে বা উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে, এমন পণ্যের ওপরও বসতো এই শুল্ক। ফলে অনেক কারখানাকে নিঃশেষ হতে হতো। তিন মাস সময় পাওয়ায় রপ্তানিকারক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান উভয়ে সময় পাবে। এর মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব।

    তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরোপিত শুল্ক স্থগিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বায়ার, রিটেইলার ও বাংলাদেশের মতো রপ্তানিকারকদের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত যেমন চিঠি দিয়েছেন, তেমনই আলোচনা শুরু করতে হবে। উপস্থাপন করতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা ভোজ্যতেল, তুলা ইত্যাদি পণ্য শুল্কমুক্ত আমদানি করি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বর্তমান যে ১৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকর আছে সেটাই থাক।

    0Shares

    আরও খবর 17

    Sponsered content