প্রতিনিধি ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ১০:৫৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
খেলাধুলা ডেস্ক: ঘরের মাঠে বরাবরই অপ্রতিরোধ্য বসুন্ধরা কিংস। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মোহামেডানের বিপক্ষে আরও একবার তা প্রমাণ করল গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ীরা।
পিছিয়ে পড়েও কোচ ভালেরিউ তিতার শিষ্যরা লিখলো দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প। সেই গল্পের শেষে শিরোপা জিতে মৌসুম শুরু করল তারা।
আজ (শুক্রবার) ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হলো ‘বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ’ দিয়ে। গত মৌসুমের দুই সেরা দল বসুন্ধরা কিংস এবং মোহামেডান নামলো সেই লড়াইয়ে। যেখানে সুলেমান দিয়াবাতের গোলে পিছিয়ে পড়ে বিরতিতে যাওয়া কিংস শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে ৩-১ গোলে।
ঘরোয়া ফুটবলে নতুন আকর্ষণ চ্যালেঞ্জ কাপ। ইউরোপীয় ফুটবলের আদলে বাংলাদেশে এমন টুর্নামেন্ট প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করলো। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অনেক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মরণ করতে ও শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশ ২.০ নামকরণ হয়েছে। ম্যাচটির আগে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শহীদ সাঈদ-মুগ্ধর গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। স্টেডিয়ামকে সাজানো হয়েছে বিপ্লবের স্মৃতি জড়িয়ে। সেই টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলেছে কিংস। এই টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি এবং টিকিট বিক্রি হতে প্রাপ্ত অর্থ দেওয়া হবে জুলাই ফাউন্ডেশনে।
আজ ম্যাচের মাত্র ষষ্ঠ মিনিটেই এগিয়ে যায় মোহামেডান। বাঁ প্রান্ত থেকে এমানুয়েল সানডের ক্রস হেডে জালে জড়ান সুলেমান দিয়াবাতে। কিছুই করার ছিল না বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর। কিন্তু তখনও ম্যাচের নাটকীয়তার ঢের বাকি। ৩১তম মিনিটে প্রথম পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করেছিল কিংস। কিন্তু মিগেল ফিগেইরো দামাসেনার কাছ থেকে নেওয়া শট সহজেই রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন। তিন মিনিট পরে আরও একবার মিগেলের শট রুখে দেন সাদা-কালো শিবিরের গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বক্সের ভেতর সতীর্থের ক্রসে হেড করেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার মিগেল। তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে প্রথমার্ধে আর সমতায় ফেরা হয়নি কিংসের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে কিংস। আক্রমণের ধার বাড়ানো দলটি একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করে। শুরুতেই ফ্রান্সের ফুটবলার জারেদ খাসার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তার ক্লাব ক্যারিয়ারে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের লিগে। সবশেষ খেলেছেন ইউক্রেনের দল কারপাতি লভিভে। বাংলাদেশে এসে অবশ্য সুবিধা করতে পারছেন না। চোট লেগেই আছে। চোট কাটিয়ে দলে ফিরে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন এই ফুটবলার। ৫৮তম মিনিটে মিগেলের ক্রস বক্সের ভেতরে পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার বাঁ পায়ের শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
৬১তম মিনিটে ঘটে অনাকাঙ্খিত এক ঘটনা। মাঠের মধ্যে স্মোক ফ্লেয়ার ছুঁড়ে মারে সমর্থকরা। ফলে খেলা বন্ধ রাখতে হয় প্রায় মিনিট দশেকের মতো। চারটি লাল রংয়ের স্মোক ফ্লেয়ারে মাঠ ভরে যায়। মাঠের যে পাশে মোহামেডান খেলছিল, সেখানের অনেকটা জায়গায় লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। এই স্মোক ফ্লেয়ার থেকে কিছুটা বারুদের গন্ধ ছড়ায়। এই কারণেই সময় নিয়ে মাঠে নামতে চান কোচ আলফাজের শিষ্যরা। ড্রপ বল দিয়ে আবারও খেলা শুরু হয়। এমন ঘটনা ঘরোয়া ফুটবল এর আগে খুব কমই দেখা গেছে।
খেলা শুরু হলে ম্যাচের ৭২তম মিনিটে কাঙ্খিত গোলের দেখা মেলে বসুন্ধরা কিংসের। মিগেলের কর্নার থেকে বল পেয়ে আলতো ছোঁয়ায় দলকে সমতা ফেরান তপু বর্মন। বক্সের ভেতর একদম আনমার্ক অবস্থায় ছিলেন তপু। বসুন্ধরার সেন্টার-ব্যাককে বক্সের ভেতর আনমার্ক অবস্থায় রাখার ভুলের মাশুল কড়ায়-গন্ডায় দিতে হয়েছে আলফাজের শিষ্যদের। বল জালে জড়াতেই ঘরের মাঠে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে কিংসের সমর্থকরা।
৮১তম মিনিটে সমর্থকদের উল্লাস দ্বিগুণ করে দেন বসুন্ধরা কিংসের ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। বক্সের ডান প্রান্ত থেকে মিগেলের ক্রস প্লেসিং শটে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ওই গোলের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি মোহামেডান। উল্টো যোগ করা সময়ের সাত মিনিটে মিগেল দামাসেনোর গোলে ব্যাধান বাড়ায় কিংস। সেই সঙ্গে দলের জয়ও নিশ্চিত করে ফেলেন এই ব্রাজিলিয়ান। কিংস আর গোল না পেলেও সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের প্রধান প্রতিপক্ষের ভূমিকায় ছিল মোহামেডান। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ সব প্রতিযোগিতায়ই বসুন্ধরাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল কোচ আলফাজের শিষ্যরা। সব প্রতিযোগিতায়ই বসুন্ধরার কাছে শিরোপা খুইয়েছিল সাদা কালোরা।