• উত্তর চট্টগ্রাম

    ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরীর মুলহোতা ফটিকছড়ির আইয়ুব

      প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২৪ , ৯:৩৬:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    নুরুল আবছার নূরী: ফটিকছড়ি উপজেলা বাসিন্দা না হয়ে ও গায়েবি নতিতে জাতীয় পরিচয় পত্র (এন,আই ডি)র অভিযোগ পাওয়া গেছে রিয়া চৌধুরী মনি নামের চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ পড়ুয়া এক তরুণীর বিরুদ্ধে। জন্মসূত্রে তার বাড়ি পাশ্ববর্তী রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা হলে ও দালাল চক্রেরের সাহায্যে জাতীয় সনদ, প্রত্যয়ন পত্র বি এস খতিয়েন সংগ্রহ করে (এন,আই,ডি) তৈরী করে সে। তার পিতা ধর্মান্তরিত মোঃ শাহ জাহান চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি রাউজান হলেও মাতা শাহ মমতাজ বেগমের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট এলাকার। জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে রিয়া চৌধুরী মনি বনে যান ফটিকছড়ি উপজেলা নারায়নহাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চাঁদপুর মুন্সি পাড়ার মৃত শাহ জাহান চৌধুরীর বড় ভাই আনোয়ার চৌধুরীর কন্যা । মৃত শাহ জাহান চৌধুরীর বড় ভাই আনোয়ার চৌধুরী ও এলাকা বাসী দাবি তার কোন কন্যা সন্তান নেই। তাঁর একমাত্র স্ত্রী ইয়াছমিন আকতারের সংসারে রায়হান চৌধুরী নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

    স্থানীয়রা জানিয়েছেন মৃত শাহ জাহান চৌধুরীর রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি গায়েল করতে নারায়নহাট বাজারের জালিয়াতি চক্রেরের হোতা আইয়ুব আলীর নজরে পড়ে তার ওই সম্পত্তি উপর।

    তাই সুকৌশলে প্রথমে বাবা হিসাবে এন.আই.ডির মাধ্যমে বহিরাগত রিয়া চৌধুরী মনিকে মৃত শাহ জাহান চৌধুরীর মেয়ে বানানো হয়েছে। এদিকে ২০২৩ সালের ২৬জুন উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে এন.আই.ডি প্রদানের ১বছর পর স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আইডিটি প্রকাশ করে বিষয়টি চট্টবাণীর নজরে এলে অনুসন্ধান করা হয়।

    ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করা এন.আই.ডির বিপরীত নথিপত্র যাচাই করে দেখা যায় রিয়া চৌধুরী মনির দুরবর্তী আত্নীয় মুসলিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত নাম্বার ব্যবহার করা হয় আবেদন পত্রে। ওই আবেদন পত্রে সনাক্তকারি এক জন স্হানীয় কম্পিউটার দোকানী ও সার্ভিয়ার মোঃ আইয়ুব আলী। আইয়ুব আলী জানা, রিয়া চৌধুরী মনি কে সেই চিনে না।কখনও থাকে দেখেনি। আবেদন পত্রে স্হানীয় মহিলা ইউপি সদস্য সাজু বেগমের শীল ও স্বাক্ষর করেন। তবে তিনি নিশ্চিত করেন শীল ও স্বাক্ষর তার নয় অভিযোগ করে তিনি বলেন জনৈক আইয়ুবের দোকানে অনেক ধরনের ভূয়াঁ সীল রয়েছে তা ব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সে। এছাড়া আবেদন ফরমে সংযুক্ত করা হয় নারায়নহাট ইউনিয়নের জাতীয় সনদ পত্র ও প্রত্যয়ন সনদ। যাচাই করে দেখা যায় জাতীয়তা সনদের ১৬১/২৩ স্বারক নাম্বার ৮ নং প্রত্যয়ন পত্র বই থেকে ৭২৭ নং প্রত্যয়ন পত্র ইউনিয়ন পরিষদের রেকর্ডে নেই।

    ইউপি সূত্রে জানা যায়ম তৎকালীন উদ্যোক্তা শিমুল নাথ পত্র ২টি সরবরাহ করেন। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক গ্রাম পুলিশ অভিযোগ করেন শিমুল নাথ নামের এক উদ্যোক্তা টাকার বিনিময়ে ভূয়াঁ কাগজ পত্র তৈরী করে থাকেন। এই ব্যাপারে জানতে শিমুল নাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেই প্রত্যয়ন পত্র কথা অস্বীকার করেন এবং প্রত্যয়ন পত্রের মুল অংশ কোথায় তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আবেদনে যুক্ত বিএস খতিয়ানটি রিয়া চৌধুরী মনি মৃত বাবা শাহ জাহান চৌধুরীসহ সংলিষ্ট কোনো আত্নীয় স্বজনের নয়।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, রিয়ার দূরবর্তী আত্নীয় মুসলিম উদ্দিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভূয়া ডকুমেন্টস তৈরী করতে পারদর্শী মোঃ আইয়ুব আলীর মাধ্যমে ফাইল তৈয়ারি করেন। আইয়ুব আলী টাকার বিনিময়ে ভূয়া সীল ব্যবহার করে মহিলা মেম্বারের স্বাক্ষর ইউনিয়ন পরিষদের আইটি অপারেটর শিমুল নাথ ও ইউপি সচিবের মাধ্যমে প্রত্যয়ন পত্র ও জাতীয় সনদ ভূয়া্ বিএস খতিয়ান জালিয়াতি করেন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি সংযুক্তি কাগজ পত্র রিয়ার খালা শাহ রেখা বেগম থেকে সংগ্রহ করেন নিখুঁত ও সুরক্ষভাবে ফাইলটি তৈয়ার হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে খুব সহজেই রিয়া চৌধুরী মনির নামে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরী হয়ে যায়। তবে ফাইল তৈয়ারিতে রিয়া চৌধুরীর বাবার মা উভয়ের এন,আই,ডি সংযুক্ত করা হয়নি।

    নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের জানিয়েছেন রিয়া চৌধুরী তার খালা শাহ রেখা চৌধুরী বাসায় থাকেন। সে সূত্রে ফটিকছড়ি নির্বাচন কার্যালয় থেকে আইডি করা হচ্ছে। তবে শাহ রেখা চৌধুরী ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইদিলপুর গ্রামের বাসিন্দা। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতি চক্রেরের হোতা সার্ভিয়ার আইয়ুব আলী মৃত শাহ জাহান চৌধুরীর অঢেল সম্পত্তি কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

    সৃষ্ট ঘটনার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের নিকট জানতে চাইলে সচিব মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, প্রত্যয়ন পত্রের মুল অংশ ও জাতীয় সনদের স্বারক আমার অফিসে সংরক্ষিত নেই। কাগজ পত্র গুলো আইয়ুব ও শিমুল ভূয়া তৈরি করতে পারেন বলে সন্দেহ হচ্ছে। তাদের সাথে যোগসাজে ও অর্থের বিনিময়ে ২টি ডকুমেন্টস তৈয়ারি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব মৃদুল কান্তি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন ভূয়া ডকুমেন্টসসহ অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আইয়ুবের কাছ থেকে মুচলেখা নেয়া হয়েছে।

    এই ব্যাপারে রিয়া চৌধুরী মনিকে ফোন করা হলে মা শাহ মমতাজ বেগম রিসিভ করেন। তিনি বলেন আমার মেয়ে এ দেশের নাগরিক। সেই যে কোনো জায়গা থেকে এন.আই.ডি করতে পারেন রিয়ার বাবার নাম ও শাহ জাহানের বাড়ি রাউজানে। তিনি নিরুদ্দেশ বলে ফটিকছড়ি থেকে এন.আই.ডি করতে হয়েছে। শিগগিরই স্হানান্তর করা হবে।

    অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আইয়ুব, মুসলিম, শিমুলসহ আরো কয়েকজনের একটি চক্র রয়েছে। তারা অর্থের বিনিময়ে এন.আই.ডি সহ নানা ডকুমেন্টস তৈরি করেন। এমন অভিযোগ স্হানীয় বাসিন্দাদের। এবিষয়ে মুসলিম উদ্দিন জানান ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আইয়ুবের মাধ্যমে এন.আই.ডি করতে হয়েছে । বাকি কাজ কিভাবে হয়েছে আমি জানিনা।

    অভিযুক্ত আইয়ুবের দোকানে গিয়ে দেখা যায় এন.আই.ডি তৈরীর জন্য অনেক গুলো ফাইল জমা রয়েছে। কিছু মানুষ আসছে তার কাজটি কখন করতে পারবে তা জানতে। আবার কেউ কেউ আইয়ুবের শিডিউল নিয়ে যাচ্ছে।

    মহাব্যস্থ আইয়ুবের ব্যাপারে স্হানীয় ইউপি সদস্য আলতাফ উদ্দিন জানান, অনিয়ম আর জালিয়তি করে সেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। গড়ে একতলা বাড়ি, কিনেছে জায়গা জমি।

    অভিযুক্ত আইয়ুব বলেন, ফাইলটি আমি তৈরি করেছি এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে তারা আমার কাছে অনলাইনে আবেদন করতে এসেছিল আবেদন করে দিয়েছি।অর্থের বিনিময়ে ফাইল তৈরি করছেন তা প্রমাণ রয়েছে এমন প্রশ্ন তুলতেই আইয়ূব বলেন, সরকার পতনের আগে সবাই কিছু কিছু দূর্নীতি করেছে, আমিও করেছি।মূলাচুরির ফাসিঁ নেই বলে সে দাবি করেন।

    এইদিকে প্রত্যয়ন পত্র ও জাতীয় সনদ পত্র স্বাক্ষর করছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ। এছাড়া রিয়া চৌধুরী রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়ন থেকে তৈরী করা জম্ম সনদ পত্রে সত্যায়িত করেছেন এই সব বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ বলেন, রিয়া চৌধুরী মনির কোনো কাগজ পত্র আমি স্বাক্ষর করিনি। এসব ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

    ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাবু অরুণ উদয় ত্রিপুরা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার নিকট মৌখিক ভাবে অভিযোগ এসেছে আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে দেখব।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নারায়নহাট ইউনিয়নের প্রশাসক মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন এন.আই.ডি তৈরিতে কেউ জালিয়াতির আশ্রয় নিলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্হা নেয়া হবে।

    আরও খবর 27

    Sponsered content