• জাতীয়

    পিটিআইকে দেওয়া ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার ভালো লাগেনি ভারতের!

      প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৫৫:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার গদি থেকে উৎখাত হওয়া ‘ভারতের বন্ধু’ বলে বিবেচিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে সম্প্রতি যে কথাগুলো বলেছেন, তা ভালোভাবে নেয়নি দেশটি।

    শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।




    পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টন, আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছিলেন।

    শেখ হাসিনাকে নিয়ে তার বার্তা ছিল, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ। তিনি বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত ভারতে অবস্থানরত হাসিনাকে চুপ থাকারও পরামর্শ দেন।

    হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে সবার সামনে বিচার করতে হবে ও তাকে ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য ভারতের সমালোচনাও করেন ড. ইউনূস।

    সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ, বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে রয়েছেন; সেখান থেকেই মাঝে মধ্যে কথাও বলছেন। এতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম। মানুষও এটা ভুলে যেত। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন। তার নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন। এটা কেউই পছন্দ করছে না। তিনি নিজের জগতে থাকলে কেউ তাকে মনে করত না।




    প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনের উপায় খুঁজে বের করবে। কেননা, বছরের পর বছর এই চুক্তিকে বিলম্বিত করা কোনো দেশের স্বার্থেই ভালো না।

    তিনি বলেন, এটি কোনো সমাধান নয়। দুই দেশের মধ্যে পানি-বণ্টন সমস্যাটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশের মতো নিম্ন নদীর দেশের তথা ভাটি অঞ্চলের দেশের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে এবং সেই অধিকার বাংলাদেশ বজায় রাখতে চায় বলেও তিনি জোর দেন।

    ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই ইস্যুটি নিয়ে বসে থেকে এটি কারও কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে না। আমি যদি জানি আমি কতটা পানি পাব, আমি যদি খুশি না হয়েও স্বাক্ষর করি তারপরও এটি ভালো হবে। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

    বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তী কোনো চাপ প্রয়োগ করবে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুশ বা চাপ একটি বড় শব্দ। আমি এটি বলছি না। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। আমাদের একসাথে বসে এটি সমাধান করতে হবে।




    তিনি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের নিন্দাও করেন।

    ভারতীয় কয়েকটি সূত্র এসব ব্যাপারে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এমন কর্তাবার্তা ভারত পছন্দ করেনি। ফলে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নাও হতে পারে।

    উল্লেখ্য, জাতিসংঘে ড. ইউনূস ও মোদির একটি বৈঠকের আয়োজন করতে গত সপ্তাহে ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও বিষয়টি নিয়ে দেশটি থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব আসেনি। তা ছাড়া নিউইয়র্কে মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত নয়।

    কোটা সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে নিজের ক্ষমতায় পেরেক ঠুকেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে ফুঁসে ওঠে ছাত্র সমাজ, তাদের সঙ্গে যোগ দেন দেশের আপামর জনতা। দুয়ের মিলনে তৈরি হয় দেশব্যাপী সরকার হটাও আন্দোলন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দমনে শুরু হয় পীড়ন। চোরাগোপ্তা হামলা, স্নাইপারের গুলি, চুরি-চাকু-চাপাতির কোপ, গুম- বিশাল হত্যাযজ্ঞ। এতেই নিজের একচ্ছত্র আধিপত্যের শেষ ডাকেন হাসিনা।




    নিজের স্বৈরতন্ত্র নিয়ে তিনি এতটাই বিমোহিত ছিলেন, সাধারণ মানুষ যে পদে পদে ধুকছে, তা তিনি দেখেননি। নিজের তির্যক মন্তব্য, ছাত্র থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে মানুষ না ভাবা শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী করে তুলেছিল। ছাত্র-জনতার এক দফা তাকে সেখান থেকে আছাড়ে মাটিতে ফেলেছে। ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ‘মাদার অব ব্রুটালিটি’ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

    গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে সেখানেই আছেন।