প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২৪ , ১০:২৯:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
আহমদুল হক: বাংলাদেশ ভিত্তিক পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন সিইএইচআরডিএফ এর পেকুয়া এরিয়া কাউন্সিল এর উদ্যোগে পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের হলরুমে সিইএইচআরডিএফ কোস্টাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কনফারেন্স সভাপতি ও সিইএইচআরডিএফ প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া’র সভাপতিত্বে এতে মূখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনার হুইল ক্লাব অব ঢাকা পেরিউনক্লির চ্যার্টার সভাপতি শারমিন ফাতেমা।
পেকুয়া এরিয়া কাউন্সিল সেক্রেটারি ও কনফারেন্স সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল হাসনাতের সঞ্চালনায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশন এর সাবেক প্রধান শিক্ষক এনামুল হক চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধরণ সম্পাদক এম দিদারুল করিম, বাপা পেকুয়া উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এফ এম সুমন।
কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনফারেন্স আহ্বায়ক ও সহকারী প্রধান লিডার(এলডিএস) আবদুল মান্নান রানা। বক্তব্য রাখেন এক্টিং -কোঅর্ডিনেটর(স্পেশাল) জিহাদুল ইসলাম।
কনফারেন্স এর শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন জিহাদুল ইসলাম।
পেকুয়া এরিয়া কাউন্সিল এর টিম সেক্রেটারি কাউচার বিন ইসলাম, এক্টিভিস্ট মুমিনুল হক কনক, সাইফুল ইসলাম রাজু, ক্লাস্টার সেক্রেটারি মোহাম্মদ রাজিব, সার্কেল সেক্রেটারি তাসিফুর রহমান মনির, এক্টিভিস্ট শাহীন হায়দার প্রমুখ।
কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তক, সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব, স্টেকহোল্ডার ও তরুণ নেতৃবৃন্দ।
এতে পরিবেশ, প্রকৃতি, খাদ্যশৃঙ্খল, বাস্তুতন্ত্র, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় করণীয়, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ, পরিবেশগত স্থায়িত্বশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় প্রশমন ও অভিযোজন কৌশল, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষিব্যবস্থা, প্রাণ-প্রকৃতির অবস্থান, প্লাস্টিক পলিথিন দূষণরোধ,লবণাক্ততা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা, পানি সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ, সবুজায়ন, উপকূলের রক্ষাকবচ খ্যাত প্যারাবন রক্ষা, টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি, জীববৈচিত্র সুরক্ষা,জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও উদ্বাস্তু মানুষের জন্য সমন্বিত উন্নতি ও অগ্রগতি, নির্বনায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহ প্রভৃতি মূলক বিষয়ে সরকার, স্থানীয় জনপ্রশাসন, জনগণ ও নাগরিক সমাজের ভূমিকার বিষয়ে কথা বলেন।
মূখ্য বক্তার বক্তব্যে শারমিন ফাতেমা বলেন জীববৈচিত্র্যে ঘেরা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পেকুয়া উপজেলা ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।তাকে কেন্দ্র করে কোস্টাল কনফারেন্স সময়ের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কনফারেন্স। এই উপকূলের মানুষ আবহমান কাল ধরে সাগর থেকে মাছ আহরণ,লবন চাষ,চিংডি ঘেরে মাছ চাষের সাথে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। বঙ্গোপসাগর প্রায় ৫শ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। কিন্তু, শিল্পকারখানা বর্জ্য,প্লাস্টিক ও পলিথিন, জাহাজের বর্জ্যর কারণে সাগরের জীববৈচিত্র আজ হুমকির মুখে। এতে বঙ্গোপসাগরের নীল অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই সম্ভাবনাময় অর্থনীতিকে অর্থবহ করতে আমাদের সকল প্রকার দূষনরোধে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া বলেন, পৃথিবীর প্রায় ২শ কোটি মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন। ফলে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের সরাসরি শিকার হয়ে থাকেন। তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিব্যবস্থা, সুপেয় পানির অবস্থান চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ড ৩৪ জন মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়ে যাচ্ছেন।মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক এসব সংকট হতে প্রকৃতি ও পরিবেশ বাঁচাতে না পারলে আমাদের কারও অস্তিত্বই থাকবে না।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন আমরা আমাদের পেকুয়াকে আগের রুপে আর দেখতে পাব কিনা প্রশ্ন রয়ে যায় যেভাবে আমরা নদী দখল করছি,দূষন করছি,ফসলি জমি ভরাট করছি,নালাগুলো প্লাস্টিক সয়লাব,পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের সময়ে খাল গুলো অনেক বড়নও গভীর ছিল যার কারণে সহজে পানি সাহরে চলে যেতো এখন যেহেতু খাল গুলো ছোট হয়ে গেছে তাই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়।২০২৩ সালে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্য আমাদের সবার জানা যেখানে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্ভাবনাময় তরুণদের এই অঞ্চলকে নিয়ে ভাবতে হবে,জীববৈচিত্র্য,পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
সাংবাদিক এম দিদারুল করিম বলেন বাংলাদেশ এ তিনটি জেলা নিয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় আছে কিন্তু দেশের ১৯ টি উপকূলীয় জেলার জন্য কোন মন্ত্রনালয় নেই এটি খবই দুঃখের। আমরা অনেক দিন ধরে উপকূলীয় মন্ত্রণালয়ের জন্য আন্দোলন করে আসছি। নির্দিষ্টভাবে উপকূল এর উন্নয়ন,সংকট ও সম্ভাবনার জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় দরকার। এই দাবির জন্য সবার আওয়াজ তুলতে হবে এবং পেকুয়া উপজেলার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জনগণ,সরকার সাংবাদিক,সুশীল সমাজ,পরিবেশবাদী সংগঠন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাগত কথায় আবদুল মান্নান রানা বলেন সিইএইচআরডিএফ বিগত দশ বছর ধরে কক্সবাজার এর উপকূলীয় উপজেলা গুলো নিয়ে কথা বলে আসছি।পেকুয়া উপজেলাটা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় যেকোনো দূর্যোগে এই উপজেলাটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই উপকূল,মানুষ,জীববৈচিত্র, জলবায়ু পরিবর্তন,স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আলোচনার জন্য আজকে আমাদের এই আয়োজন।
এফ এম সুমন বলেন বিশ্ব এখন একটি নতুন বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জানতে পেরেছি যার প্রভাবে দাবদাহ,অতিবৃষ্টি,অনাবৃষ্টি,খরা,দাবনল,বন্য,ঘুর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। এতে বাদ যাচ্ছে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কোন দেশ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন এর আমরা দায়ী না হলেও আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে।তাই আমাদের এই অঞ্চলের তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতন হতে হবে, প্রান প্রকৃতি,পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের সামনের সারিতে থাকতে হবে কারণ আগামীর দিন তরুণদের। নিজের পরিবেশ নিজেকে তৈরী করে নিতে হবে।
জিহাদুল ইসলাম বলেন জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য বাংলাদেশ মোটেই দায়ী নয় কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। তাই বাংলাদশের জলবায়ু কর্মীরা জলবায়ু পরিবর্তন এর কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নেয়া,কমিয়ে আনা এবং জলবায়ুর সাথে খাপ-খাওয়ানোর জন্য জলবায়ু তহবিল থেকে ন্যায্যতার ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে দাবি আদায়ে আরও জোরালো ভুমিকা রাখতে পারে। তরুণরা যেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য তরুণদের বিকল্প নেই।