প্রতিনিধি ২ মার্চ ২০২৪ , ১১:২৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
ডেস্ক রিপোর্ট: নিজের বিরুদ্ধে এক টাকা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমান ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
লন্ডনে দীর্ঘ প্রায় ৬ দশকের পৈত্রিক ব্যবসার কথা উল্লেখ করে তিনি বিদেশে নিজের ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন।
তবে ওই ব্যবসা-সম্পদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেন।শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।
ব্রিটেনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ‘হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ’ আছে বলে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া নির্বাচনী হলফনামায় নিজের বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেসব বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
মন্ত্রী থাকার সময় কোনো দুর্নীতি করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানান সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় কোনো চুরি করিনি। আমি দলকেও বিব্রত করতে চাই না, সরকারকেও বিব্রত করতে চাই না। আমি খুশি হবো, আমি মন্ত্রী থাকার সময় কোনো দুর্নীতি করেছি কি না এই বিষয়ে যদি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়। কারণ মন্ত্রী হিসেবে আমার দেশ ও জাতির কাছে জবাবদিহিতা আছে। আমাকে অবশ্যই বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। একজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, একজন সাংবাদিক ও সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন প্রতিনিধি দিয়ে যদি কমিটি করা হয় তাহলে আমি খুশি হবো। আমি মন্ত্রী থাকার সময় কী করেছি, এটা পরিষ্কার করা হোক। এটা আমার জন্য খুব কমফোর্টের ব্যাপার হবে। এই কমিটি যদি আমার বিরুদ্ধে এক টাকার দুর্নীতি পায়, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আমার পদ থেকে রিজাইন দেব। আমি খুবই পরিষ্কার মানুষ। খুবই সিনসিয়ারলি সততার সঙ্গে কাজ করি।
তিনি আরো বলেন, গত কিছুদিন ধরে আমাকে নিয়ে বেশ কিছু নিউজ হয়েছে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে। অনেকের প্রশ্ন, যখন এই নিউজগুলো এলো, তখন আমি কেন নীরব ছিলাম? আসলে আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের বাইরে থাকার সময় আমাকে নিয়ে নিউজগুলো এসেছে। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশে এসে আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করবো। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম, দায়িত্বে ছিলাম। মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহিতা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের (সংবাদকর্মী) অনুরোধ করবো, আমার ব্যবসা এবং রাজনীতি, দুটোকে মিক্স করবেন না। আমি ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কাম ব্যবসায়ী নই। পারিবারিক সূত্রেও আমি ব্যবসায়ী। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সন্তান এবং দীর্ঘদিন ধরে আমি ব্যবসা করে আসছি। আমি আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার শুরু করেছি আমেরিকায় লেখাপড়া করার শেষ পর্যায়ে।
সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, নিউজগুলোতে আমার হলফনামা নিয়ে কথা এসেছে। আমি হলফনামায় কেন তথ্য গোপন করেছি? আমি জানি না বার বার কেন এই কথা আসছে। আমি আগেও বারবার পরিষ্কার করেছি, আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। নির্বাচনের সময়ে যে হলফনামা দিতে হয়, সেটি ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে মিল রেখে দিতে হয়। আমি সর্বশেষ চতুর্থবার নির্বাচন করেছি। আগে যেভাবে হলফনামা দিয়েছিলাম, এবারও সেভাবে দিয়েছি। হলফনামায় যেহেতু বিদেশের সম্পত্তি উল্লেখ করার জন্য কোনো কলাম নেই, সে কারণে আমি বাড়তি কোনো তথ্য দিইনি। এখানে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই।
তিনি আরও বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় আমি যে কাজগুলো করেছি, সেগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। আমার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকতো, আমি কখনোই এগুলো করতাম না। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে জাতি এবং দেশকে দেওয়ার জন্য, নেওয়ার জন্য নয়। আমরা যদি কিছু না করে যেতে পারি, তাহলে আমরা মনে করি বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত নেই। আমাদের কাছে সাধারণভাবেই মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই হিসেবেই আমি আমার কাজগুলো মোটামুটি করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় পড়াশোনা করেছি আশির দশকে। আমার পড়াশোনা যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হই। যেহেতু আমার বাবা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন ১৯৬৭ এ। ওই সূত্র থেকে আমাদের শুরু। ছোটবেলা থেকেই আমাদের লন্ডন-আমেরিকায় বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। ওই সূত্র থেকে আমাদের কাজ। আমাদের ট্রেডিং ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, সুপার মার্কেট, রিয়েল এস্টেট এমন অনেক ব্যবসা ছিল। সেখান থেকে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। আমি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশি নিইনি। বাংলাদেশ থেকে যদি কোনো টাকা নিতাম অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতাম। যদি অনুমতি না নিয়ে বিদেশে টাকা নিতাম, তাহলে আমার অপরাধবোধ হতো।
তিনি আরও বলেন, আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার ৩০ বছরের বেশি। আর আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ১১-১২ বছর। আমার বাবার বিদেশের ব্যবসা প্রায় ৫০ বছরের ওপরে। সুতরাং, আমার বাবা আমাকে এভাবে ট্রেইনড করে দিয়ে গেছে, যে দেশেও ব্যবসা করতে হবে, বিদেশেও ব্যবসা করতে হবে। শুধু লন্ডন-আমেরিকা নয়, যেই দেশে সুযোগ আসে, সেই দেশে আমরা বিজনেস করি। এখানে লুকোচুরি করার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, টিআইবির বিষয়টি নিয়ে আমি সারপ্রাইজড। এমন একটি সময় তারা নিউজটি জানালো, ঠিক নির্বাচনের সাত দিন আগে। এটা কি সরকারকে বিব্রত করার জন্য আমাকে দিয়ে। কেন? অনেকে বলছে, আমি মন্ত্রী থাকার সময় আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। হ্যাঁ, আমি এটা স্বীকার করছি। কেন আমি করেছি। কারণ করোনার সময় বিশ্ব যখন লকডাউন হয়ে গেলো, তখন আমি দেখেছি, আমার জন্য সুযোগ এসেছে। দ্রুত রিয়েল এস্টেটের দাম পড়ে গেছে। ব্যাংক ঋণে সুদ কমে গেছে। আমি রিস্ক নিয়ে সেই সুযোগ নিয়েছি এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি।