প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২৩ , ১০:১৯:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের এক দফা, এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই। সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা আর নির্বাচনে যাব না।
ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে রাজপথে ফয়সালা হবে। জনগণকে সুসংগঠিত করে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে।
সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেলে খুলনায় অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তরুণ জাগলে বাঁচবে দেশ, ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ- এই স্লোগান সামনে রেখেই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই। ইসির নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। দেশে চরম রাজনৈতিক সংকট চলছে।
তিনি বলেন, আজ ঢাকা ১৭ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে আসেনি। কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে এজেন্ট বেশি ছিল। এরপরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা হয়েছে। তাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ডেঙ্গুতে ছেয়ে গেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যখন ডেঙ্গু মহামারিতে রূপ নিচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে রয়েছেন। আর ঢাকা সিটি মেয়র গোটা পরিবার নিয়ে ইউরোপ সফরে গেছেন।
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ আমাদের আশা জোগায়। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে সুসংগঠিত করে অবৈধ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তা না হলে শুধু ভোট নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। বিএনপির গন্ধ থাকলে আজ চাকরি দেওয়া হয় না। এ সরকার মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। কথা বললেই হত্যা-গুম করা হচ্ছে। এটা সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্বপ্নের বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা।
সমাবেশের প্রধান বক্তা যুবদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, এ সরকার অবৈধ হওয়ায় তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। জনগণের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করে এ সরকার টিকে থাকতে চায়। চার কোটি ৭০ লাখ তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। এ সরকার পালানোর জায়গা পাবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, র্যাব, পুলিশ বাদ দিয়ে মাঠে আসুন। যদি নিজের বাসা থেকে হেঁটে পার্টি অফিসে যেতে পারেন, তাহলে আর দল করব না। ভোট চুরি করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর আমরা এ কথা বললেই গা জ্বলে। এই সরকারের লজ্জা নেই।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ শুরু হয়। শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএম মুসা। তরুণ ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য দাবিতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল এ সমাবেশ আয়োজন করে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে শহর। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে সমাবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মী বাড়তে থাকে। দুপুরের পর সমাবেশস্থলে বহু জনতার সমাগম হয়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমাবেশমঞ্চে সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত চলে জাসাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মনা, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান প্রমুখ।