প্রতিনিধি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৯:৫৭:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: নির্বাচনে অনিয়ম করে কেউ জয়ী হওয়ার পর ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হলেও তা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন।
তিনি জানান, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতা সংক্রান্ত ওই সংশোধনী প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে।
আরপিও সংশোধনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এ জেলা জজ বলেন, দুয়েকটি জায়গায় আরও চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল। ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলে না, তাই ১ শতাংশ ভোটারের ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি আমরা নির্ধারিত করে দিতে চাচ্ছিলাম। আইনে এক শতাংশের বেশি অনুমোদন করবো না, এমনটি আসুক। উনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন, এটা বিধিমালা দিয়ে আওতায় আনা সম্ভব। এ বিষয়টিতেই তারা আপত্তি করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পর অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নাই। বন্ধ করা বা এ সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য সংশোধনীর প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম। যাতে ফলাফল ঘোষণার পর ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু উনারা বললেন, ৯১ (অনুচ্ছেদ) দিয়েই কাভার হচ্ছে। কিন্তু তা হয় না আমরা জানি। উনাদের যুক্তিটা তুলে ধরলাম।
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আমি কমিশনে যোগ দেওয়ার পর একটি ফাইল এলো। ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে হয়ত ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু মাননীয় হাইকোর্ট বললেন, গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। আমরা এজন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে; প্রস্তাব করেছিলাম। উনারা জানতে চাইলে আমরা এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।
গেজেট হওয়ার পরে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে, তার আগে তো পারা যাবে না। যখন একজন হারবেন, তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, উনার অধিকার। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইলেন। কিন্তু সেটি তো উদ্ধার হয়নি। কখন কার কাছে চলে গেছে। তো যেটা উদ্ধার হয়নি, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে? এক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এই রকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত যাতে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ, যিনি ডিপ্রাইভড হলেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এই কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি।
এ নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাশ হবে সংসদে। এটাই উনারা পাঠাবেন। ভেটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না। কেবিনেট থেকে সংসদে যাবে। উনারা যদি মনে করেন কোনটা রাখবো, কোনটা রাখবো না, এতে তো কারোরই কিছু বলার নাই। আইন মন্ত্রণালয়েরও প্র্যাকটিক্যালি কিছু করার থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমরা বলেই দেব কত শতাংশ ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে। ১ শতাংশ একটি জাস্টিফাইড সংখ্যা। প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অতীতে নাকি ৫ শতাংশও দেওয়া হয়েছিল; এমন অভিযোগ অনেকে করেন। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর বলতে পারবে না তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারবো। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারবো। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিয়ে দিলেই হবে।
ভোটে সাংবাদিকদের দূরে রাখার বিষয়ে কমিশনার বলেন, সাংবাদিকদের দূরে রাখতে চাই না। রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা আমরা দিইনি। কোথা থেকে যে হলো আমি নিজেও জানি না। হয়তো আগের কোনো নির্দেশনায় ছিল। সম্ভবত মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছিল। আমরা আপনাদের জন্য আরপিওতে ব্যবস্থা রাখছি। যন্ত্র কেড়ে নিলে শাস্তির প্রস্তাব করেছি।