প্রতিনিধি ১৯ মার্চ ২০২৩ , ১২:৪৭:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: গাজীপুরের বাসন থানায় পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে কারামুক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। শনিবার (১৮ মার্চ) রাত পৌনে ৮টার দিকে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় নিজ মালিকানাধীন ফারিশতা রেস্টুরেন্টের সামনে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।
মাহিয়া মাহি বলেন, আমি লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি। একজন পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই আমার লাইভে বলাতে পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছি হয়তো। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি যে দেড় কোটি টাকার কথা বলেছি সেটা অবশ্যই তদন্ত হবে। আমি ন্যায়বিচারের জন্য সবার কাছে যাবে। আমি অন্যায় করে থাকলে শাস্তি মাথা পেতে নেব।
তিনি বলেন, আমাকে যখন প্লেন থেকে নিয়ে আসলো ইমিগ্রেশন পুলিশ, আমার সাথে কাউকে কথা বলতে দিল না, আমার মামাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছি, গাজীপুরের পুলিশ তারা ওয়্যারলেসে কথা পর্যন্ত বলছিল না। কারণ ওয়্যারলেসে কথা বললে যদি অন্যরা আমার লোকেশন পেয়ে যায়।
মাহিয়া মাহি বলেন, আমি কি এত বড় আসামি হয়ে গেছি? আমি তো এত বড় আসামি না। আমি লাইভে একজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, সে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে, আমি সেটার আসামি। কিন্তু আমি তো কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী না। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি মাত্র।
তিনি আরও বলেন, আমি সব কিছু নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। আমি একটা পরিচিত মুখ হওয়ার পরও আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি বার বার বলছিলাম প্রচণ্ড গরম লাগছে, আমার শ্বাসকস্ট হচ্ছে, আমি ঠান্ডা পানি চাচ্ছিলাম, পুলিশ আমাকে এক ঘণ্টা পরে পানি দিয়েছে। এতো কিসের গোপনীয়তা? আমি তো এ রকম কোনো আসামি না। আমি মাহি হয়েও আজকে আমার সাথে যা হয়েছে, আমি নয় মাসের প্রেগনেন্ট হওয়ার পরও মানবিকতা পাইনি, আমার স্বামীর বিরুদ্ধেও এ মামলা আছে। আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমাকে যখন কোর্টে নেওয়া হয়েছে। কোর্টে নেওয়ার পরে বিচারক তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার কিছুই করেননি।
মাহিয়া মাহি বলেন, আমি আগেই বলেছি, আপনি যখন সর্বোচ্চ অসহায় থাকবেন, আপনার জায়গা-জমি নিয়ে একজন চলে যাচ্ছে, আপনি এটা নিয়ে বহুদিন ধরে লড়াই করতেছেন, যখন আপনি এটার কোনো ন্যায়বিচার পাবেন না, তখন আপনি কী করবেন? আপনি কাকে বিচার দেবেন, আমি বিচার পাইনি, আমি একমাস ধরে ঘুরতেছি। একমাস ধরে সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি অভিযোগ করার পর সে (পুলিশ) আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে বেপরোয়া হয়ে নয় মাসের প্রেগনেন্ট একটা মহিলাকে সেই এয়ারপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ধরে নিয়ে আসছে। একটা ঠান্ডা পানি দেওয়ার জন্য এক ঘণ্টা লাগছে। আমি শ্বাসকষ্টের রোগী। বলেছি আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তারা এটার কোনো তোয়াক্কা করেনি। আমাকে সেইভাবে ট্রিট করা হয়েছে। তাহলে বুঝেন এই লোকটা (পুলিশ কমিশনার) কতটুকু বেপরোয়া হয়ে গেছেন। এর বিরুদ্ধে আমি কী করব? যখন দেখতেছি আমার জায়গা নিয়ে চলে যাচ্ছে একজন লোক, তখন আমি দেশে নাই, দেশে থাকলে আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম, সামনে গিয়ে আমি ফাইট করতে পারতাম। তখন হয়তো ফাইট-মাইট করে মামলা হতো। সেটা তো করার সুযোগ নাই। তখন আমি কি করব, লাইভে না যেয়ে আমি কী করব। আমি লাইভে যাওয়ার আগে বারবার কমিশনারকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা আমলে নেননি।
প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পুলিশের দেড় কোটি টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আপনি আসলে নিজে উপলব্ধি করবেন আপনি নিজে জানবেন। কিন্তু এসব বিষয়ে অনেক সময় আলামত থাকে না। আমি সামান্য জিডি করতে পারি নাই। জিডি করতে যখন গেছি তখন আমাকে থানা থেকে বলা হয়েছে ডিসির (উপ-পুলিশ কমিশনার) কাছে পারমিশন নিতে হবে। আমি যদি জিডি করতে না পারি, আপনি গিয়ে কীভাবে তা পারবেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরে কমিশনারের নির্দেশে যখন আমার স্বামীর অন্যান্য জায়গা-জমি ইনকুয়ারি করতেছে, পুলিশ তো জায়গা জমি নিয়ে ইনকুয়ারি করার কথা নয়। পুলিশ জায়গা জমির কাগজ নেওয়ার কথা নয়, কিন্তু সে বারবার জায়গার কাগজ নিয়ে ডাকতেছে, সে কাগজ দেখবে। জমি-জমার বিষয়ে কাগজপত্র দেখবে আদালত। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলব, তার কাছে আমার আইজীবীরা যাবেন, কথা বলবেন। তারাই ওই টাকার সত্যতা বের করবেন।
মাহি বলেন, আমার কথা হচ্ছে আমি খুবই আতঙ্কিত। যেমন হচ্ছে আমার জিডিতে যা লেখা ছিল, যেমন একটা গ্রুপ গিয়ে জায়গা দখল করে নেবে এবং ওই সময় পুলিশ আমাদের সাহায্য করবে না, পুলিশ সাথে সাথে যাবে না। আমাদের সনিরাজ দখল হয়ে যাবে। আমার জিডির ভাষা অনুযায়ী কিন্তু সেই কাজটিই হয়েছে। আমাকে আজকে যেভাবে পুলিশ ট্রিট করেছে, আমার স্বামী দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আরও টর্চার করবে। আমাদের পুরো সরকার পরিবারকে এই কমিশনার বিতর্কিত করবে। সবার মাধ্যমে আমি তা বলতে চাই। আমার স্বামী আসার পর তাকে যেন টর্চার না করা হয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের লোকজনকে প্রচণ্ড হয়রানি করা হচ্ছে, ৯ জনকে জেলে দেখে আসছি। আমাদের লোকজনকে যেন হয়রানি না করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহির এক মামা ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।