চট্টবাণী: চাটগাঁইয়া গানে নবযুগের স্রষ্টা, বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আবদুল গফুর হালীর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (২১ ডিসেম্বর)। ২০১৬ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পটিয়ার নিজ গ্রামে বাগে ভাণ্ডারী দায়রা শরীফে পারিবারিকভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, মাইজভাণ্ডারী ও মরমী গানের কালজয়ী গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী আবদুল গফুর হালী মোহছেন আউলিয়ার গানের প্রবর্তক এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাটকের পথিকৃৎ রচয়িতা।
গফুর হালী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, সেলিম নিজামী ও শিমুল শীলের সংগীতগুরু। তিনি আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তী জুটি শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা। আবদুল গফুর হালী রচিত শ্যাম-শেফালীর গাওয়া ‘বন্ধু আঁর দুয়াদ্দি য আঁর লয় হতা কেয়া ন হঅ, বানু রে জি জি জি, তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু মাছ মারিবল্লায়, ন যাইও ন যাইও আঁরে ফেলাই বাপর বাড়িত ন যাইও’ এসব গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। গফুর হালীর সাড়া জাগানো আঞ্চলিক গানের মধ্যে রয়েছে, ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা, রসিক তেলকাজলা পাঞ্জাবিওয়ালা, মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে, ও শ্যাম রেঙ্গুম ন যাইওরে, ঢোল বাজের আর মাইক বাজের, বাইন দুয়াদ্দি ন আইস্য তুঁই নিশির কালে, তুঁই মুখ ক্যা গইজ্য কালা, চোডকাইল্যা পিরিত আঁর’। গফুর হালী রচিত মাইজভাণ্ডারী, মরমী ও মোহছেন আউলিয়ার গানের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে, দুই কূলের সোলতান ভাণ্ডারী, আমি আমারে বেইচা দিছি মাইজভাণ্ডারে যাই, দেহ ছাড়ি প্রাণ গেলেরে, চলরে জিয়ারতে আউলিয়ার দরবার’ ইত্যাদি।
আবদুল গফুর হালীর মাইজভাণ্ডারী গান নিয়ে জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. হান্স হার্দার প্রকাশ করেছেন গবেষণাগ্রন্থ ‘ডার ফেরুখটে গফুর স্প্রিখট’। বিশ্ববরেণ্য সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ড. পিটার বার্টুসি গফুর হালীর গান নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া আমেরিকার এমোরি ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ড. বেঞ্জামিন ক্রাকাউর গফুর হালীর গান নিয়ে গবেষণা করছেন।
সুফি মিজান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আনোয়ারুল হক চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় আবদুল গফুর হালীর ৩০০ গানের স্বরলিপিসহ তনিটি গীতিাকাব্য ‘সুরের বন্ধন, শিকড় ও দিওয়ানে মাইজভাণ্ডারী’ এবং নাটকসংগ্রহ ‘আবদুল গফুর হালীর চাটগাঁইয়া নাটকসমগ্র’ প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের কিংবদন্তী শিল্পীদের মধ্যে একমাত্র গফুর হালীর ৩০০ গানের স্বরলিপিসহ গীতিকাব্য প্রকাশিত হয়েছে যা চাটগাঁইয়া গানের হাজার বছরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।