• আন্তর্জাতিক

    বাংলাদেশ ইস্যুতে শুক্রবারও উত্তপ্ত কলকাতা

      প্রতিনিধি ২৯ নভেম্বর ২০২৪ , ১০:৪১:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    চট্টবাণী ডেস্ক: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার নিয়ে শুক্রবারও (২৯ নভেম্বর) উত্তপ্ত রইল কলকাতা। এতে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারীরা সকলেই।

    শুক্রবার মিশনে স্মারকলিপি জমা দিতে আসে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। তারা পার্কসার্কাস ময়দান থেকে বিশাল মিছিল করে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের দিকে এগোতে থাকে। মাঝপথেই বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

    ২০২১ সালে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি তৈরি করেন রাজনৈতিক দল আইএসএফ। মূলত এই দলের নেতাকর্মী থেকে সদস্য সিংহভাগ ভারতে সংখ্যালঘু অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বর্তমানে আব্বাসের ভাই নওশাদ সিদ্দিক বিধায়ক(এমএলএ) এবং বেশ জনপ্রিয়।

    ফলে স্বভাবতই আইএসএফের নেতৃত্বে বাংলাদেশে মিশনে জমায়েত করেন মুসলিম সম্প্রদায়। তাদের দাবি ছিল বাংলাদেশ মিশনের সামনে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। কিন্তু তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এরপরই ধুন্দুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় পার্কসার্কাস অঞ্চলে।

    পরে বাংলাদেশের মিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের অনুমতিতে পাঁচজনকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। যারা অনুমতি পান তারা হলেন – শামসুর আলি মল্লিক (ওয়ার্কিং কমিটির প্রেসিডেন্ট), বিশ্বজিৎ মাইতি (জেনারেল সেক্রেটারি), তাপস ব্যানার্জী (ভাইস প্রেসিডেন্ট) নাসিরুদ্দিন মীর (অফিস সেক্রেটারি) এবং মওলানা কতুবুদ্দিন ফতেহী (অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি)।

    বাইরে ছিল তখন পুলিশ। মিশনের ভেতরে তখন রিসিপশন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেহেতাব তা গ্রহণ করতে গেলে আইএসএফ কর্মী তা দিতে অস্বীকার করেন। এরপরই অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করতে থাকে পাঁচ সদস্যের টিম। ভেতরে তখন চরম বিশৃঙ্খলার তৈরি হয়। তাদের দাবি, আমরা কোনো অফিসিয়ালের হাতে স্মারক লিপি জমা দেব এবং আমাদের বক্তব্য রাখব।

    অফিসিয়ালের তরফে রিসিপশনে ফোন মারফত বলা হয়, বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে দেখা করা সম্ভব নয়। এরপরই আরও উত্তেজনা তৈরি হয় মিশন প্রাঙ্গণে। যে কারণে সমস্যায় পড়েন মিশনের কর্মচারীরা। পরে পুলিশ তাদের বাইরে বের করে দিলে মিশনের গেট আগলে বসে পড়েন পাঁচজন।

    তাদের দাবি, যতক্ষণ না অফিসিয়াল নিজেরা এসে স্মারক লিপি জমা নেবে ততক্ষণ আমরা কাউকে ভেতরে আসতে দেব না এবং বের হতেও দেব।

    এমন পরিস্থিতিতে অফিস ছুটির পরও মিশনের ভেতরে দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়েন কর্মচারীরা। পরে পুলিশ ওই পাঁচজনকে জানায়, মিশনের সামনে এ ধরনের প্রতিবাদ করা যায় না। গেট না ছেড়ে দিলে আমরা বাধ্য হবো বল প্রয়োগ করতে।

    তারা জানায়, আমাদের ভাইজান (নওশাদ সিদ্দিকি) আসছে। তারপরই গেট ছাড়ব। বিধায়কের নাম শোনায় সম্ভবত পুলিশ কিছুটা থমকে যায়। মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন তারা। অফিসিয়ালের তরফে বলা হয় বিধায়ক এলে দেখা করব। তবে কোনো কর্মী কথায় আমরা দেখা করতে পারি না। পরবর্তীতে নওশাদ এসে পৌঁছালে শান্ত হয় পরিস্থিতি। নওশাদসহ বাকি পাঁচজন ভেতরে প্রবেশ করে এবং স্মারক লিপি তুলে দেয় অফিসিয়ালদের হাতে।

    পরে নওশাদ সাংবাদিক উদ্দেশ্য বলেছেন, সংখ্যালঘুরাই, সংখ্যালঘুদের সমস্যা বোঝে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন মেনে নেব না। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ধর্মগুরু চিন্ময়কে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমরা ইউনূস সাহেবকে বলব, শক্ত হাতে এই ঘটনার প্রতিরোধ করুন। এই নির্যাতন চলতে থাকলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে যাব। আজ সবে শুরু করলাম আমরা।

    নওশাদ আরও বলেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগে আমরাও খুশিতে শামিল হয়েছিলাম। বাংলাদেশের ছাত্র-যুবাদের আন্দোলনকে আমরাও শরিক হয়েছিলাম। আমরাও ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। আমরা চাই প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে। কিন্তু সে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেব না। কারণ আমরাও ভারতের সংখ্যালঘু।

    তাদের যাওয়ার পরই বাংলাদেশ মিশনে এসে স্মারকলিপি জমা দেয় ‘অল ইন্ডিয়া সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’- এর প্রেসিডেন্ট কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম। একইভাবে এদিন এই ইস্যুতে কলকাতা প্রেসক্লাবে, প্রেস কনফারেন্স এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ।

    আরও খবর 15

    Sponsered content