নুরুল আবছার নূরী : ফটিকছড়ি উপজেলা কিশোর কিশোরী ক্লাবের অধিনে সাংস্কৃতিক, আবৃত্তি ও কারাতে প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ ছফি উল্লাহর বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে যোগদানের পর থেকে এই প্রকল্পের টাকা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে জেলা অডিটর টিম ও উপজেলা ট্রেজার (হিসাব রক্ষণ বিভাগকে ও ম্যানেজ করে তিনি এ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে। যতই দিন যাচ্ছে অভিযোগের পাল্লা ভারি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রশিক্ষাণার্থীরা। অবগত না থাকলে ও দায়িত্বরত প্রশিক্ষকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ নিয়ে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ট্রেনার ও জেন্ডার প্রমোটির বলেন প্রশিক্ষণের নাস্তায় কি খাওয়ানো হবে এটাতে আমাদের কোন ভুমিকা নেই।
উপজেলা অফিস থেকে যে বরাদ্দ পাই তা দিয়ে নাস্তা পরিবেশন করে থাকি।মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত কিশোর কিশোরী ক্লাব স্হাপন প্রকল্পে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গান আবৃত্তি ও কারাতের মতো সৃজনশীল, এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর কিশোরীদের সম্পৃক্ত করাসহ জেন্ডার ভিত্তিক নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ও মাদক প্রতিরোধ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এতে প্রতিটি ক্লাবে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ২০ জন কিশোর কিশোরীকে সদস্য করা হয়। কিশোর কিশোরীদের সাংস্কৃতিক বিকাশে বাল্য বিবাহ রোধ গান আবৃত্তি ও কারাতে নির্দেশনা দেন।২০১৮ সালে এ প্রকল্প গ্রহণ করেন শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলা বিভিন্ন বিষয়ে কিশোর কিশোরীদের সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ১৭ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভাসহ মোট ১৯ টি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্লাব গুলোতেই সর্বমোট ৫৭০ জন কিশোর কিশোরীর সদস্য হিসাবে রয়েছে।
ক্লাবগুলো পরিচালনা করার জন্য ১জন সংগীত শিক্ষক ও ১ জন আবৃত্তি শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া উপজেলায় ৪জন জেন্ডার প্রমোটর প্রতিটি ক্লাবে এক জন কোর্ডিনেটর ও রয়েছে।
বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জনের নাস্তার বাবদ জনপতি ৩০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।ক্লাবগুলোতেই ১৫ থেক ২০ টাকার নাস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি মাসে উপজেলা ক্লাবে ৮ দিনে ৫৭০ জনের মোট ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা মাসিক বরাদ্দ দেয়া হয়।
কিন্তু নামেমাত্র বরাদ্দের অংশ খরচ করে বাকি টাকা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ ছফি উল্লাহ পকেটে চলে যায়। এতে করে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে কিশোর কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা।গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এক একটি কেন্দ্রের চিত্র এক এক রকম। উপজেলা সদরের সাথে লাগোয়া পাইন্দং উচ্চ বিদ্যালেয়ের কেন্দ্রটি বন্ধ পাওয়া গেলে ও সুয়াবিল আবদুল করিম উচ্চ বিদ্যালেয়র শিক্ষার্থীদের নাস্তা হিসাবে দেওয়া হয় ১টি জুস ১টি বিস্কুটের প্যাকেট।
লম্বাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের পাওয়া যায়নি হাজিরা খাতা। নাজিরহাট পৌরসভার এ.বি.সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে ও ততক্ষণে প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যায়। তবে প্রশিক্ষণর্থীরা জানান সব সময় জুস,বিস্কুট ও চিপস খাওয়ানো হয়।একই চিত্র লেলাং ইউনিয়নের শাহনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ৩০জনের বিপরীতে ৯০০ টাকা বরাদ্দ থাকিলে ও সেখানে ১৪০ টাকা দিয়ে নাস্তার বিষয়টি শেষ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বছরের শেষে অডিট টিমকে খুশি করতে একটি ফান্ড তৈরি করতে হয় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে।তাই তিনি তাদের আপ্যায়ন খরচ ও সম্মানি হিসাবে একটি অংশ দিতে হয়। প্রতি শিক্ষার্থীর পিছনে ২০ টাকা মতো খরচ করা হয়ে থাকে।
জেলায় গিয়ে এ সম্মানি দিয়ে আসেন মহিলা বিষয়ক সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন স্যার যে ভাবে নির্দেশনা দেন সে ভাবে কাজ করতে হয়।
কেন বা কি কারণে দেন সেটা তিনি (মোঃ ছফি উল্লাহ) ভালো বলতে পারবেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ ছফি উল্লাহ সম্মানি হিসাবে অডিট টিমকে ১৫ হাজার টাকার ১টি পেকেট দেয়ার কথা স্বীকার করেন। এছাড়া ট্রেজারি অফিসকে ও উপজেলা হিসাব বিভাগে ও কমিশন দিতে হয় বলে ও তিনি জানান। এ কর্মকর্তা আরও জানান অফিসের বিভিন্ন খরচ থাকে তা ব্যবস্হা করা কঠিন। ফলে ৩০ টাকা বরাদ্দ থেকে বাচিয়ে খরচ খরচ করতে হয়।অডিটাকে টাকা নাদিলে হয়রানি করেন বলে ও অভিযোগ করেন তিনি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন ও কর্মকর্তাকে ডেকে এ ব্যাপারে জানতে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।