চট্টবাণী ডেস্ক: চলতি মৌসুমেই প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের’ ব্যবহার বন্ধ, পর্যটকের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বেশকিছু বিধিনিষেধ বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সেন্টমাটিন দ্বীপ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে সোমবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, দেশের তিনটি পর্যটন স্পট সেন্টমার্টিন, কক্সাবাজার এবং কুয়াকাটাকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারমুক্ত করার কাজটা আমরা শুরু করব। এটা একদিনে হবে না। কিন্তু আমরা কাজটা শুরু করব।
তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে মন্ত্রণালয় মোটামুটি প্রস্তুত আছে। এর আগের সময়টিতে সেন্টমার্টিন নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রবাল দ্বীপ আর বাংলাদেশে কোথাও নেই। এখানে বেশ কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী, পাখি, কাছিম এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। খুবই ছোট এই দ্বীপ। এটাকে আমরা কীভাবে রক্ষা করতে পারি, সেজন্য সরকার কিছু কাজ আগেই করেছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ আইনে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকাটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। আবার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে মেরিন প্রটেক্টেড এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বীপটি দিনকে দিন নাজুক হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্তণালয় সভায় ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে দিনের বেলা পর্যটন চালু থাকবে, রাতের বেলা থাকতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সেন্টমার্টিন প্রবেশের ক্ষেত্রে নিবন্ধন এবং সংখ্যা সর্বোচ্চ এক হাজার ২৫০ জন এবং জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সিদ্ধান্ত হয় লঞ্চ-জাহাজে মোট যাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ২৫০ জনের মধ্যে রাখতে হবে এবং একজন ব্যক্তি একজন ব্যক্তি পাঁচজনের বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না। ধারাবাহিকভাবে সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলোর কোনোটি বাস্তবায়িত হয়নি।
এরপর পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে একটি পর্যটন নির্দেশিকা দিয়েছে, যাতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিয়ে যাওয়া যাবে না। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকাও করতে বলা হয়। সামুদ্রিক কাছিমের ডিম কুকুর খেয়ে ফেলে। সেগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়। ওই সময় ৮৮২ জনের কথা বলা হয়। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে এবং নির্দেশিকাটি মানতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন চলছে, প্রতিবেশ রক্ষা করতে আমরা কী কী কাজ করতে পারি।
সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে একটা টাইমফ্রেমে আমাদের আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি আমরা একসাথে সিদ্ধান্তে আসতে পারব। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাঁচলে আগামী প্রজন্মের জন্যও বাঁচবে। আর যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমার সোনার ডিম পাড়া হাসের মতো সবাই মিলে গিয়ে ওটাকে শেষ করে দেই তাহলে পর্যটনটা থাকছে না। একটা সময়সীমার মধ্যে আমাদের আসতে হবে। সেটা সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।
সামনে পর্যটন মৌসুম আসছে, সিদ্ধান্ত কি আগেই হবে কি না, এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর বা ডিসেম্বর থেকে। এর আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন কর্মপন্থায় যাব, সেটা হলো বিষয়, কোনটা নিলে আসলেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা হোটেল মালিক, ট্যুর অপারেটর, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে চাই। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার কাজ শুরু হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা বাঁচুক। এটা আমাদের জন্য বাঁচুক, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচুক। আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা সবাই দেখুক। কিন্তু একই লোক পাঁচবার না যাক। আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা একটা কোলাহলমুক্ত দ্বীপ হোক।
গত মৌসুমে দুই লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ওইখানে কোনো হাসপাতাল নেই। আপনি যদি পর্যটন করতে চান তাহলে এগুলো ভাবতে হবে। আমরা চাই দ্বীপটা রক্ষা হোক এবং পর্যটনটাকেও আমরা একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসি।
কেউ কেউ বলছেন সেন্টমার্টিনে মিয়ারমারের আরাকান আর্মি এসেছে, কেউ বলছে কুকি চিনের কেউ কেউ এসেছে আবার কেউ কেউ বলছে আমেরিকান নৌবহর এসেছে। প্রকৃত চিত্র কী জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এমন কোনো তথ্য আসেনি। হোটেল-মোটেল মালিকের সঙ্গে যখন কথা হয়, ওনারা এরকম কোনো কথা বলেননি। দেখি আজকে তারা কোনো কথা বলেন কি না। আমাদের তো প্রিজামশন, অ্যাজামশনের শেষ নাই। প্রিজামশন, অ্যাজামশন যাতে না হয়, সেজন্য আপনাদের সঙ্গে বসা।