চট্টবাণী: কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তফা নঈম ও সদস্যসচিব রমেন দাশগুপ্ত এ কৃতজ্ঞতা জানান।
তারা বলেন, কোটি মানুষের প্রাণের দাবি ছিল কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে আশা জাগানিয়া একটি অগ্রগতি হয়েছে।
জাতির সূর্যসন্তান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়ার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
অন্তত চার দশক আগে থেকে এ অঞ্চলের মানুষ কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু নির্মাণের আকুতি জানিয়ে আসছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে, প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে কালুরঘাট সেতুর বিষয়টি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে সেতুর বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। ২০১৪ সালের শুরুতে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম। ’ এর মধ্য দিয়েই সেতুর দাবি প্রথম জনসম্মুখে আসে এবং সেটি গণদাবিতে পরিণত হয়।
এরপর পরিষদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সেতুসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিবিড় যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আজ আমরা এ প্রেক্ষাপটে পৌঁছেছি। আমাদের এ কর্মযজ্ঞে বিদ্যমান সময় পর্যন্ত আমরা সবসময় পাশে পেয়েছি গণমাধ্যমকে।
দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, সেতুর দাবিটি গণদাবি হলেও চার দশক ধরে সেটি বরাবর উপেক্ষার শিকার হয়েছে, আবার কখনও আলোর পথে গেলেও গতি ছিল খুবই মন্থর। অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় বারবার আটকে থেকেছে প্রাণের দাবি, যে কারণে দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষায় থেকে মানুষকে হতাশ হতে হয়েছে। কিন্তু দেশ-জাতির বহু আকাঙ্ক্ষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে যে গতিতে সেতুটি একনেকে অনুমোদন হলো, তাতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় রেলপথ উপদেষ্টার প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কর্মতৎপরতায় চট্টগ্রামবাসী আশার আলো দেখছে।
বিনয়ের সঙ্গে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, সেতু নির্মাণের কার্যক্রমের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আর যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বাধাবিঘ্ন, বিলম্ব সৃষ্টি না হয়, সেতু বাস্তবায়নের কার্যক্রমে সৃষ্ট প্রত্যাশিত গতি যেন বহাল থাকে, দরপত্রসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই যেন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে যে প্রাণসঞ্চার হয়েছে, মানুষ যেভাবে আশায় বুক বেঁধেছে, অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা কিংবা কালক্ষেপণের কারণে সেটি যেন চরম হতাশায় পরিণত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে সজাগ থাকার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং রেলপথ উপদেষ্টা, উভয়ে চট্টগ্রামের সুযোগ্য সন্তান, সেতু নির্মাণের প্রাকপ্রক্রিয়ায় আমরা তাঁদের আন্তরিক নজরদারি প্রত্যাশা করছি।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) চারটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। চারটি প্রকল্প হলো: কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ, মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত), সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (২য় সংশোধিত) এবং রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইউটিডিপি)। অন্তর্বতী সরকারের দ্বিতীয় একনেকে সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ পাওয়া যাবে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত এবং দুটি নতুন প্রকল্প রয়েছে।
একনেক বৈঠক শেষে বিকেল ৩টায় শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।