রাঙামাটি প্রতিনিধি: অনিন্দ্য সুন্দর পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় পর্যটক আকর্ষণের প্রাণকেন্দ্র। সারা বছর এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
যেকোনো উৎসবের ছুটিতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। হোটেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেক পর্যটককে তাঁবু টাঙিয়ে রাত্রি যাপন করতেও দেখা যায় নিয়মিত।
আর পর্যটকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সাজেকে অসংখ্য কটেজ-হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে পর্যটকনির্ভর অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষেরা জীবিকা নির্বাহ করে পর্যটকদের উপজীব্য করেই।
তবে সম্প্রতি সাজেক ভ্যালির এসব কটেজ, হোটেল ও মোটেল ফাঁকা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই বেচাবিক্রি। একটানা গত ১৪ দিন ধরে কোনো পর্যটক নেই সাজেকে। যে কারণে সাজেক কটেজ এবং পরিবহন মালিকরা প্রায় ১৫-১৬ কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারেননি। আয়বঞ্চিত হয়েছে ৭-৮ কোটি টাকা। লোকসান গুনেছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা।
সাজেক পর্যটনহীন থাকার কারণ, পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিরতা। নিরাপত্তাহীনতা ভুগে সাজেকে যাচ্ছেন না পর্যটক। সাজেক ভ্রমণে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বার বার।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে মো. মামুন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর জেলার দিঘীনালা উপজেলার লারমা স্কোয়ার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় সেখানে তিনজন নিহত হন।
এ ঘটনায় রেশ হিসেবে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ বাধে। এতে দোকানপাট, ধর্মীয় স্থাপনা এবং সরকারি ভবন ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় এক যুবক নিহত হন। আহত হন ৬৩ জন।
গত ০১ অক্টোবর খাগড়াছড়ির টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে পাহাড়ি ছাত্র-যুবরা পিটিয়ে মারলে সেখানে পাহাড়ি-বাঙালিদের সংঘর্ষ বাধে।
এসব সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সাজেকে নতুন করে কোনো পর্যটক যেতে পারেনি। এর মধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং জানমালের নিরাপত্তা দিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ০৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দফায় একটানা নয় দিন সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, গত ২০ তারিখ থেকে একটানা ১৪ দিন পর্যটকশূন্য সাজেক। এ মৌসুমে সহিংসতার ঘটনা না ঘটলে তারা ব্যবসা করতে পারতেন ৯-১০ কোটি টাকা এবং লাভবান হতে পারতেন ৪-৫ কোটি টাকা।
পর্যটক আসতে না পারায় তাদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সরকারকে ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করছি। কিন্তু আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।
রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়িসহ সাজেকের পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান তিনি।
সাজেক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে প্রতিদিন সাজেকে তাদের ৫০-৬০টি চান্দের গাড়ি (জিপ গাড়ি) পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করে। প্রতি শুক্রবার ১৫০-১৬০টি গাড়ি এবং শনিবার ৮০-১০০টি গাড়ি সাজেক-খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে থাকে।
তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো পর্যটক না আসায় পরিবহন ব্যবসায়ীরা ৫-৬ কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ মৌসুমে ব্যবসা করতে পারলে তাদের দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় আসতো। পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের এক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
পরিবহন মালিক সমিতির এ নেতা আরও জানান, পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে তাদের পরিবহন ব্যবসা দাঁড়িয়েছে। এ পরিবহন খাতে এখানে কয়েকশো শ্রমিক জড়িত। ব্যবসা না হওয়ায় তারাও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এইজন্য সাজেকে পর্যটকদের নিয়মিত যাতায়াতে নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।